Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

বৈষ্ণব পদাবলির কবি চণ্ডীদাস সম্পর্কে লিখুন

পদাবলীর চণ্ডীদাস (১৩৭০-১৪০০) : মধ্যযুগের চতুর্দশ শতকের বাঙালি কবি। তিনি চৈতন্য-পূর্ব বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলী রচয়িতা হিসেবে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। চৈতন্যদেবের জন্মের আগে থেকেই চণ্ডীদাসের নামোল্লেখিত বহু গীতিপদ মানুষের মুখে মুখে ফিরত। চৈতন্যদেব নিজে তাঁর পদ আস্বাদন করতেন। শ্রুতি আছে, রজকিনী রামী তাঁর সহজসাধনের সঙ্গিনী ছিলেন।

বাংলা সাহিত্যে চণ্ডীদাস সমস্যা :

বাংলা ভাষায় রাধা ও কৃষ্ণের প্রেম সম্পর্কিত প্রায় ১২৫০ টির অধিক কাব্যের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে রচয়িতা হিসেবে বড়ু চণ্ডীদাস, দীন চণ্ডীদাস ও দ্বিজ চণ্ডীদাস তিনটি ভিন্ন নামের উল্লেখ রয়েছে আবার কোনোটিতে রচয়িতার নামের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় নি। এ কাব্যগুলো ভণিতা নামে পরিচিত। ভণিতা একই ব্যক্তি কর্তৃক রচিত কিনা তা পরিষ্কার করে জানা যায় না। আধুনিক পণ্ডিতরা ধারনা করে থাকেন, বর্তমান যে সকল কবিতা চণ্ডীদাসের নামে রয়েছে তা অন্তত চারজন ভিন্ন চণ্ডীদাস কর্তৃক রচিত হয়েছে। ভণিতা কাব্যের রচনাশৈলী অনুযায়ী তাদের পৃথক করা যায়।

প্রথম চণ্ডীদাস হিসেবে পদাবলীর চণ্ডীদাসকে ধারণা করা হয় যিনি আনুমানিক ১৪ শতকে বীরভূম জেলায় (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ) জন্ম নেন; তিনি চৈতন্য-পূর্ব বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলী রচয়িতা হিসেবে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। কারও কারও মতে, তিনিই মধ্যযুগীয় বাংলা কবিতার অন্যতম নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন রচনা করেন।

তবে ড. মিহির চৌধুরী কামিল্যা ভাষাতাত্ত্বিক তথ্যপ্রমাণের সাহায্যে প্রমাণ করেছেন, ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস বাঁকুড়া জেলার সদর মহকুমাস্থ ছাতনার অধিবাসী ছিলেন।

এই কাব্যে কবি নিজেকে অনন্ত বড়ু চন্ডীদাস হিসাবে ভণিতা দিয়েছেন। তাঁর আসল নাম অনন্ত, কৌলিক উপাধি বড়ু, এবং গুরুপ্রদত্ত নাম চণ্ডীদাস। তিনি বাসলী/বাশুলী দেবীর উপাসক ছিলেন বীরভূমের নানুরে এই দেবীর মন্দির আছে)। “বড়ু” শব্দটি “বটু” বা “বাড়ুজ্যে” (বন্দ্যোপাধ্যায় ) শব্দের অপভ্রংশ বলে মনে করা হয়।

চণ্ডীদাসের মৃত্যু সম্বন্ধে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের আবিষ্কর্তা বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ স্থানীয় প্রবাদের উল্লেখ করেছেন – বীরভূমের নানুরে বাশুলীদেবীর মন্দিরের কাছে চণ্ডীদাসের কীর্তন দলের একটি নাট্যশালা ছিল। চণ্ডীদাস একবার গৌড়ের নবাবের রাজসভায় গান গাওয়ার অনুরোধ রক্ষা করতে সেখানে যান। তাঁর কণ্ঠে ভক্তি-প্রেমের গান শুনে নবাবের বেগম মুগ্ধ হয়ে যান এবং তিনি চণ্ডীদাসের গুণের অনুরাগিণী হয়ে পড়েন। বেগম একথা নবাবের কাছে স্বীকার করলে নবাব ক্রোধের বশে চণ্ডীদাসকে মৃত্যুর দণ্ডাদেশ দেন। আত্মীয় বন্ধুবর্গের সামনে চণ্ডীদাস হস্তিপৃষ্ঠে আবদ্ধ হয়ে নিদারুণ কশাঘাত সহ্য করে প্রাণবিসর্জন দেন; বেগম সেই দৃশ্য দেখে শোকে মুৰ্চ্ছিতা হয়ে প্রাণবিয়োগ করেন।[৪] কথিত আছে, শূদ্র কন্যা রামীর সঙ্গে তার প্রেম ছিল বলে স্থানীয় লোকজন তাকে মেরে তার বাড়িতে চাপা দিয়ে দেয়। আবার কারও মতে তিনি সেই সময়ের বৈষ্ণব পীঠস্থান ইলামবাজারে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

দীন চণ্ডীদাস এবং দ্বিজ চণ্ডীদাস নামক ভণিতার দুইজন কবিকে চৈতন্য-পরবর্তী যুগের কবি বলে ধারণা করা হয়। তবে এই নামদুটি ভনিতার হেরফের মাত্র বলেই অনুমিত হয়।

চণ্ডীদাসের কিছু পদ ও তার পর্যায়

(১) সই কেবা শুনাইল শ্যামনাম (পূর্বরাগ)

(২) রাধার কি হইল অন্তরে ব্যথা (পূর্বরাগ)

(৩) ঘরের বাহিরে দণ্ডে শতবার (পূর্বরাগ)

(৪) একে কুলবতী ধনি। (পূর্বরাগ )

(৫) এমন পীড়িতি কভূ নাহি দেখি শুনি (পূর্বরাগ )

(৬) কাহারে কহিব মনের মরম (পূর্বরাগ )

(৭) এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা (অভিসার)

(৮) যত নিবারিয়ে চাই নিবার না যায় গো (আক্ষেপানুরাগ )

(৯) বঁধু, কি আর বলিব তোরে (আক্ষেপানুরাগ )

(১০) কি মোহিনী জান বঁধু (আক্ষেপানুরাগ )

(১১) তোমারে বুঝাই বঁধু তোমারে বুঝাই (আক্ষেপানুরাগ)

(১২) মন মোর আর নাহি লাগে গৃহ কাজে (আক্ষেপানুরাগ )

(১৩) কাল জল ঢালিতে সই কালা পড়ে মনে (আক্ষেপানুরাগ)

(১৪) বঁধু কি আর বলিব আমি (নিবেদন)

(১৫) বঁধু তুমি যে অ্যাম্বার প্রাণ (নিবেদন)

(১৬) ললিতার কথা শুনি হাসি হাসি বিনোদিনী (মাথুর) 

(১৭) রাইয়ের দশা সখীর মুখে (মাথুর)

আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)

বৈষ্ণব পদাবলী কী? বৈষ্ণব পদাবলী বিভিন্ন পর্যায় ও বৈষ্ণব পদাবলীর তত্ত্ব গুলো আলোচনা করুন

বৈষ্ণব পদাবলির কবি বিদ্যাপতি সম্পর্কে লিখুন

বৈষ্ণব পদাবলির কবি চণ্ডীদাস সম্পর্কে লিখুন

বৈষ্ণব পদাবলির কবি গোবিন্দ দাস সম্পর্কে লিখুন

বৈষ্ণব পদাবলির কবি জ্ঞানদাস সম্পর্কে লিখুন

বাংলা সাহিত্যে চণ্ডীদাস সমস্যা আলোচনা করুন

বৈষ্ণব পদাবলি সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী মহিলা কবি হিসেবে পরিচিত। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য, মানবিক অনুভূতি, প্রেম, বিরহ, এবং সমাজের বিভিন্ন দিকগুলো

Read More

মুহম্মদ আবদুল হাই এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মুহম্মদ আবদুল হাই (২৬ নভেম্বর ১৯১৯ – ৩ জুন ১৯৬৯) বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান ধ্বনিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যিক। তার গবেষণা এবং কর্ম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ

Read More

ন্যায় দর্শনের বিষয়বস্তু: ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? ন্যায় দর্শন কী বা কাকে বলে? ন্যায় দর্শনের কয়টি শাখা ও কি কি?

ন্যায়দর্শন হচ্ছে ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম একটি দর্শন। ন্যায়দর্শন হল সেই ভিত্তি যার উপর ভারতের উচ্চতর দর্শনগুলি নির্মিত হয়েছে। ন্যায় দর্শনের প্রবক্তা বা প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি

Read More

বিদ্রোহী কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়

‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৮ সালের কার্তিকে, ২য় বর্ষের ৩য় সংখ্যক ‘মােসলেম ভারত’ পত্রিকায়। কবিতাটি রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের দুর্গাপূজার কাছাকাছি সময়ে। নজরুলের বিদ্রোহী

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.