‘Colony’ শব্দটি থেকে “ colonialism ” কথাটি এসেছে। প্রাচীনকাল থেকে ২০ শতকের শুরু পর্যন্ত শক্তিশালী দেশগুলো ঔপনিবেশিকতার মাধ্যমে বিশ্বে তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিল। বিংশ শতকে এসব ইউরোপীয় শক্তির অধীন দেশগুলো একের পর এক স্বাধীন হয়ে যায়। সদ্যপ্রাপ্ত স্বাধীনতার ঢেউ লাগে সর্বত্র। রাজনৈতিকভাবে যেমন এসব দেশে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে, তেমনি শিল্পসাহিত্যের ক্ষেত্রেও লাগে নতুন আন্দোলনের ছোঁয়া। এসব আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম হলো- ‘ উত্তর-উপনিবেশবাদ ‘ বা ‘Post Colonialism’।
উত্তর-উপনিবেশী তাত্ত্বিক ফয়েজ আলমের মতে, “উপনিবেশী শাসকদের উদ্যেগে সমর্থনে পরিচালিত স্বার্থসংশিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা ও জ্ঞানচর্চার কারণে উপনিবেশিত দেশ ও জাতির ঐতিহ্য অভিজ্ঞতা ও ভাবনার জগৎ ও তার ক্ষেত্রে যেসব নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে সেগুলো চিহ্নিত ও দূর করা এবং আধিপত্যমুক্ত জ্ঞানচর্চার পথ খুলে দেয়ার কিছু তাত্ত্বিক প্রণোদনা ও উপায় এবং একরকম আন্দোলন বলা যেত পারে উত্তর-উপনিবেশবাদ। চরিত্রের দিক থেকে এটি একটি পাল্টা জ্ঞানভাষ্য।” [আলম, ফয়েজ (২০০৬), উত্তর- উপনিবেশী মন ঢাকা; সংবেদ প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১১]
উত্তর-উপনিবেশিকতা শব্দটি ব্যপকভাবে বোঝায় অনেক উপনিবেশিত দেশ তাদের স্বাধীনতা লাভ করার পরে, যে উপায়ে জাতি, জাতিসমূহ, সংস্কৃতি এবং মানব পরিচয় আধুনিকযুগে যেভাবে উপস্থাপিত হয়। মূলত উত্তর-উপনিবেশবাদ হল উপনিবেশবাদের প্রতি প্রবল সমালোচনামূলক একটি দৃষ্টিভঙ্গি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উপনিবেশগুলো স্বাধীন হলেও দেশগুলোর শিক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতি এমনকি চিন্তাগত দিক হতে উপনিবেশী প্রভাব মুক্ত হতে পারেনি। উত্তর- উপনিবেশবাদ (Post-Colonialism ) বলতে পশ্চিমা ঐ একতরফা জ্ঞান-শৃঙ্খলার আধিপত্যকে অস্বীকার করা, তার বিপরীতে এককালের উপনিবেশিত জনগোষ্ঠীর নিজস্ব স্বর ও ভঙ্গিমা, সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের অনুসন্ধান করা। উত্তর-উপনিবেশবাদ যাচাই করতে চায় তার অন্তরে বাহিরে উপনিবেশের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও ধরন।
আরো পড়ুন : (বিষয়ের উপর ক্লিক করুন)