Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Category: ইতিহাস ও দর্শন

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

অস্তিত্ববাদ অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা

Read More
অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ, অস্তিত্ববাদের সংজ্ঞার্থ : অস্তিত্ববাদের পটভূমি, অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা কোন

Read More
বিনির্মাণবাদ, ডিকনস্ট্রাকশন (Deconstruction)

ডিকনস্ট্রাকশন (Deconstruction)

ভূমিকা: বিনির্মাণবাদ হলো টেক্সট এবং তার অর্থের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার একটা পদ্ধতি, বিশেষ করে দর্শন ও সাহিত্য সম্পর্কিত ভাষার একটা বিচারমূলক অনুসন্ধান যার ভেতর দিয়ে ভাষার অভ্যন্তরীণ ও ধারণাগত প্রকৃতির অবয়ব বোঝার চেষ্টা করা হয়। তাছাড়া অর্থ সম্পর্কিত গুণগত মান এবং যা বলা হয়নি সেসব না বলা বাণীর অর্থ যাচাইয়ের এক পদ্ধতির কাজে বিনির্মাণ শব্দটা ব্যবহার করা হয়। বিনির্মাণতত্ব বহুরৈখিক মাত্রার ফলাফল। প্রতিটা বাক্যের একাধিক অর্থ থাকতে পারে এবং সেগুলো পরস্পর বিরোধী হতে পারে। এই পরস্পর বিরোধী মাত্রাগুলো একজায়গায় এনে সরল কিছু করার সুযোগ নেই। ব্যখ্যামূলক পাঠের মধ্যে আছে ধাঁধা যেগুলোকে বলে অ্যাপরিয়া, এই অ্যাপরিয়াই বিনির্মাণবাদের মূল প্রেরণা। বিনির্মাণবাদের সংজ্ঞার্থ J.W. Bertens তাঁর ”Literary Theory: Basics” গ্রন্থে দারিদার বিনির্মাণতত্বের একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলছেন, দারিদা তাঁর বিনির্মাণতত্বে বলছেন, ভাষা প্রকৃতিগতভাবে অনির্ভরযোগ্য ব্যাপার। একটা শব্দ প্রকৃতপক্ষে যাকে রেফার করে সেটা কিন্তু ফলত শব্দের সাথে শব্দের পার্থক্য, সরাসরি কোন নির্দেশক নয়। কাজেই এই শব্দগুলো একটা ভাষিক পদ্ধতির মধ্যে কাজ করে, যা কখনই বাস্তব জগতকে স্পর্শ করে না। বাস্তবতা ভাষিক প্রকৃতি নির্ধারণ করে। একটা শব্দের থেকে আরেকটা শব্দের যে পার্থক্য যার প্রেক্ষিতে ঐ শব্দটা স্বতন্ত্র হয় তাকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হয়। তবে বিনির্মাণ তত্বের একটা বড় ফলাফল হলো, এই তত্ব মনে করে কোন শব্দের অর্থ কোন সময়ই একটা সময়ের ফ্রেমে আবদ্ধ নয়, যার প্রেক্ষিতে এটা চলমান ও পরিবর্তনশীল। দারিদা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাচন প্রক্রিয়ায় কোন পারমাণবিক বিভাজন নেই (There is no atom: Dialanguages: in Points … Interviews, 1974-94)। এর অর্থ আমরা ভাষা দিয়ে যা প্রকাশ করি তার সবটুকু বিভাজন করা সম্ভব। জীবন কী? জীবন অনেক কিছুর সমন্বয়, সম্ভবত বহু মাত্রার এক সমন্বিত দ্যোতনা। কবি রণজিৎ দাসের এক কবিতা দিয়ে দারিদার বিনির্মাণতত্বকে বোঝাতে চেয়েছেন দারিদা বিশেষজ্ঞ তপোধির ভট্টাচার্য তার “জাক দেরিদা তাঁর বিনির্মাণ” গ্রন্থে। “যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন সূর্যাস্ত, নারী, গির্জা ও গোলাপ যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন উৎসব, চাঁদ, নৌকো ও সমুদ্র যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন বিগ্রহ, ধুপ, মুদ্রা, পূজারিণী যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন পাহাড়, মেঘ, শালবন, চিঠি ও চুম্বন যা কিছু বিষণ্ণ করে, গরম ভাত, হাতপাখা, গন্ধলেবু, আদিবাসী গ্রাম যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন সার্কাস, তাঁবু, ফেরিঘাট, পাগলের হাসি যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন মায়ের ছবি, ডাকঘর, শিলাবৃষ্টি, মাঝিদের গান যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন সমস্তই, হে জীবন, তোমার আনন্দ-অভিধান”। [‘যা কিছু বিষণ্ণ করে’, সন্ধ্যার পাগল, রণজিৎ দাস] কবির এই বিচিত্র ও ভিন্ন ভিন্ন অনুভবের ভেতর দিয়ে জীবনের নানা প্রকরণের উন্মেষগুলো প্রকাশিত হয়েছে নানা রঙ্গে, নানা ঢঙে। আসলেই তো জীবনের বিচিত্র রাগ, দুঃখ, মৃত্যু, বিরহ, শান্তি, আনন্দ –এসবই তো জীবনের অংশ। কবিগুরু তো বললেন, “তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা, বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে”॥ জীবনের এই বহুমাত্রিকতা, বহুঅনুভবতা আর নিত্য পরিবর্তনশীলতাই তো বিনির্মাণতত্বের সারৎসার। অধ্যাপক তপোধির ঠিকই বলেছেন, “সমস্ত অনুষঙ্গ মনে রেখে লেখা যায়, দেরিদার বিনির্মাণপন্থা আসলে সমস্ত বাচনিক, প্রতীতিগত (ধারণা সম্বন্ধীয়), মনস্ত্বাতিক, নান্দনিক, ঐতিহাসিক, নৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও পাঠকৃতি বিষয়ক দৃশ্য–প্রপঞ্চ- পরিস্থিতিকে আমুল আলোড়িত –রূপান্তরিত- পুনঃস্থাপিত করার কৃতকৌশল”(পৃ. ১২৬)। দেরিদার বি-গঠনবাদী পাঠ-প্রস্তাবনার উদ্দেশ্যও প্রায় একই রকম। দেরিদা বলেন, বি-গঠনবাদী পাঠ অবশ্যই কতগুলো সম্পর্কের দিকে লক্ষ্য রাখবে, যেগুলোর দিকে লেখক নিজে লক্ষ্য করেননি, তার ভাষা ব্যবহারের ধরন দিয়ে কী তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, আর কী চাননি… ‘বি-গঠন অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করে। (‘Of Grammatology’ পৃ:-১৫৮, ১৬৩)

Read More
বিনির্মাণবাদ, ডিকনস্ট্রাকশন (Deconstruction)

বিনির্মাণবাদ

ভূমিকা: বিনির্মাণবাদ হলো টেক্সট এবং তার অর্থের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার একটা পদ্ধতি, বিশেষ করে দর্শন ও সাহিত্য সম্পর্কিত ভাষার একটা বিচারমূলক অনুসন্ধান যার ভেতর দিয়ে ভাষার অভ্যন্তরীণ ও ধারণাগত প্রকৃতির অবয়ব বোঝার চেষ্টা করা হয়। তাছাড়া অর্থ সম্পর্কিত গুণগত মান এবং যা বলা হয়নি সেসব না বলা বাণীর অর্থ যাচাইয়ের এক পদ্ধতির কাজে বিনির্মাণ শব্দটা ব্যবহার করা হয়। বিনির্মাণতত্ব বহুরৈখিক মাত্রার ফলাফল। প্রতিটা বাক্যের একাধিক অর্থ থাকতে পারে এবং সেগুলো পরস্পর বিরোধী হতে পারে। এই পরস্পর বিরোধী মাত্রাগুলো একজায়গায় এনে সরল কিছু করার সুযোগ নেই। ব্যখ্যামূলক পাঠের মধ্যে আছে ধাঁধা যেগুলোকে বলে অ্যাপরিয়া, এই অ্যাপরিয়াই বিনির্মাণবাদের মূল প্রেরণা। বিনির্মাণবাদের সংজ্ঞার্থ J.W. Bertens তাঁর ”Literary Theory: Basics” গ্রন্থে দারিদার বিনির্মাণতত্বের একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলছেন, দারিদা তাঁর বিনির্মাণতত্বে বলছেন, ভাষা প্রকৃতিগতভাবে অনির্ভরযোগ্য ব্যাপার। একটা শব্দ প্রকৃতপক্ষে যাকে রেফার করে সেটা কিন্তু ফলত শব্দের সাথে শব্দের পার্থক্য, সরাসরি কোন নির্দেশক নয়। কাজেই এই শব্দগুলো একটা ভাষিক পদ্ধতির মধ্যে কাজ করে, যা কখনই বাস্তব জগতকে স্পর্শ করে না। বাস্তবতা ভাষিক প্রকৃতি নির্ধারণ করে। একটা শব্দের থেকে আরেকটা শব্দের যে পার্থক্য যার প্রেক্ষিতে ঐ শব্দটা স্বতন্ত্র হয় তাকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হয়। তবে বিনির্মাণ তত্বের একটা বড় ফলাফল হলো, এই তত্ব মনে করে কোন শব্দের অর্থ কোন সময়ই একটা সময়ের ফ্রেমে আবদ্ধ নয়, যার প্রেক্ষিতে এটা চলমান ও পরিবর্তনশীল। দারিদা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাচন প্রক্রিয়ায় কোন পারমাণবিক বিভাজন নেই (There is no atom: Dialanguages: in Points … Interviews, 1974-94)। এর অর্থ আমরা ভাষা দিয়ে যা প্রকাশ করি তার সবটুকু বিভাজন করা সম্ভব। জীবন কী? জীবন অনেক কিছুর সমন্বয়, সম্ভবত বহু মাত্রার এক সমন্বিত দ্যোতনা। কবি রণজিৎ দাসের এক কবিতা দিয়ে দারিদার বিনির্মাণতত্বকে বোঝাতে চেয়েছেন দারিদা বিশেষজ্ঞ তপোধির ভট্টাচার্য তার “জাক দেরিদা তাঁর বিনির্মাণ” গ্রন্থে। “যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন সূর্যাস্ত, নারী, গির্জা ও গোলাপ যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন উৎসব, চাঁদ, নৌকো ও সমুদ্র যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন বিগ্রহ, ধুপ, মুদ্রা, পূজারিণী যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন পাহাড়, মেঘ, শালবন, চিঠি ও চুম্বন যা কিছু বিষণ্ণ করে, গরম ভাত, হাতপাখা, গন্ধলেবু, আদিবাসী গ্রাম যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন সার্কাস, তাঁবু, ফেরিঘাট, পাগলের হাসি যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন মায়ের ছবি, ডাকঘর, শিলাবৃষ্টি, মাঝিদের গান যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন সমস্তই, হে জীবন, তোমার আনন্দ-অভিধান”। [‘যা কিছু বিষণ্ণ করে’, সন্ধ্যার পাগল, রণজিৎ দাস] কবির এই বিচিত্র ও ভিন্ন ভিন্ন অনুভবের ভেতর দিয়ে জীবনের নানা প্রকরণের উন্মেষগুলো প্রকাশিত হয়েছে নানা রঙ্গে, নানা ঢঙে। আসলেই তো জীবনের বিচিত্র রাগ, দুঃখ, মৃত্যু, বিরহ, শান্তি, আনন্দ –এসবই তো জীবনের অংশ। কবিগুরু তো বললেন, “তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা, বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে”॥ জীবনের এই বহুমাত্রিকতা, বহুঅনুভবতা আর নিত্য পরিবর্তনশীলতাই তো বিনির্মাণতত্বের সারৎসার। অধ্যাপক তপোধির ঠিকই বলেছেন, “সমস্ত অনুষঙ্গ মনে রেখে লেখা যায়, দেরিদার বিনির্মাণপন্থা আসলে সমস্ত বাচনিক, প্রতীতিগত (ধারণা সম্বন্ধীয়), মনস্ত্বাতিক, নান্দনিক, ঐতিহাসিক, নৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও পাঠকৃতি বিষয়ক দৃশ্য–প্রপঞ্চ- পরিস্থিতিকে আমুল আলোড়িত –রূপান্তরিত- পুনঃস্থাপিত করার কৃতকৌশল”(পৃ. ১২৬)। দেরিদার বি-গঠনবাদী পাঠ-প্রস্তাবনার উদ্দেশ্যও প্রায় একই রকম। দেরিদা বলেন, বি-গঠনবাদী পাঠ অবশ্যই কতগুলো সম্পর্কের দিকে লক্ষ্য রাখবে, যেগুলোর দিকে লেখক নিজে লক্ষ্য করেননি, তার ভাষা ব্যবহারের ধরন দিয়ে কী তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, আর কী চাননি… ‘বি-গঠন অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করে। (‘Of Grammatology’ পৃ:-১৫৮, ১৬৩)

Read More
বিনির্মাণবাদে বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের সৃষ্টিকর্ম

জাক দেরিদা ও বিনির্মাণবাদ : বিনির্মাণবাদ তত্ত্ব ও দেরিদার ডিকনস্ট্রাকশন

জাক দেরিদা বিংশ শতাব্দীর একজন ফরাসি দার্শনিক। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পৃথিবীর চিন্তাশীল মনিষীদের মধ্যে তিনি ছিলেন খ্যাতির শীর্ষে। তার প্রবর্তিত তত্ত্ব ডিকন্সট্রাকশন (অ-নির্মাণ বা বিনির্মাণ) নামে অভিহিত। দেরিদার চিন্তা ও বিশ্লেষণ উত্তরাধুনিক দর্শনের সাথে জড়িত এবং তার দার্শনিক অভিমুখ উত্তর কাঠামোবাদী (post-structuralist) কাজ হিসেবে পরিগণিত। দেরিদা তার বিভিন্ন বক্তবব্যে ও লেখায় কাঠামোবাদের (structuralism) নানা দুর্বলতা, অসঙ্গতি ও অপর্যাপ্ততা চিহ্নিত করেন।সৃষ্ট কোনও তত্ত্বকে চিরন্তন সত্য মনে করে স্থির বসে থাকলে আমরা কোনোদিনও সত্যে উপনীত হতে পারি না। তাই আগের তত্ত্বগুলো খারিজ করে আমাদের নিয়ত নতুন তত্ত্বের এষণায় থাকতে হয়। মোটামুটি এ-ই হলো দেরিদার চিন্তার সারাৎসার। দেরিদা দেখান: * প্রতিটা বাক্যের একাধিক অর্থ হতে পারে * সেই অর্থগুলো পরস্পর-বিরোধী হতে পারে * একই বাক্যের নানা ব্যাখ্যার পরস্পর-বিরোধিতা কমানোর উপায় নেই * তাই ব্যাখ্যা-মূলক পাঠের সীমাবদ্ধতা আছে- এটাকে এপোরিয়া বলে ডিকনস্ট্রাশনের মূলে আছে ডিফারেন্স (Différance)। এ তত্ত্ব অনুযায়ী: একটি শব্দের নির্দিষ্ট কোন অর্থ নেই- একটি শব্দের অর্থ তার কাছাকাছি সে সমার্থক শব্দগুলো আছে, তার সাথে পার্থক্য করে নির্ণয় করতে হয়। বাড়ি শব্দটির অর্থ নির্ণয় করতে আমদের দেখতে হবে কীকরে এই শব্দটি ঘর, গৃহ, বাটিকা, প্রাসাদ, অট্টালিকা ইত্যাদি শব্দের থেকে আলাদা। যেহেতু প্রতিটি শব্দ একটি ইমেজ বা ছবি (আসল বা এবস্ট্রাক্ট)’র প্রতিনিধিত্ব করে, সেহেতু বাড়ির সাথে গৃহ, বাটিকা, অট্টালিকা ইত্যাদি শব্দের পার্থক্য নিরূপণ করতে, একই সাথে সমার্থক শব্দগুলোর ইমেজ, সামাজিক, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকেও ভাবতে হবে। দেরিদা তার বিভিন্ন বক্তবব্যে ও লেখায় কাঠামোবাদের (structuralism) নানা দুর্বলতা, অসঙ্গতি ও অপর্যাপ্ততা চিহ্নিত করেছেন। মানবিক ও সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তার প্রভাব রয়েছে। দর্শন, সাহিত্য ছাড়াও আইন নৃতত্ত্ব, ইতিহাস-রচনা, ভাষাতত্ত্ব, সামাজিক-ভাষাতত্ত্ব, মনোঃসমীক্ষণ, রাজনৈতিক তত্ত্ব, ধর্মগবেষণা, নারীবাদ, সমকামিতা গবেষণায়ও তার প্রভাব আছে। দেরিদা ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুলাই তৎকালীন ফ্রান্স অধ্যুষিত আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স নগরীর এল বিয়ার শহরতলিতে এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে মুসলিম-প্রধান আলজিরিয়ায়। ছাত্রজীবনেই রুশো, নিৎসে, সার্ত্র, কামু ইত্যাদির পাঠ সেরে ফেলেন। সরবোন, কলম্বিয়া, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থিতু হন। এখানেই তিনি আমৃত্যু মানববিদ্যার অধ্যাপনা করেন। তিনি রলাঁ বার্থ, জাক লাকাঁ, লুসিয়ঁ গোল্ডমান, জঁ-পল ভেরনা, ত্রিস্তান তোদোরব এবং জঁ ইপ্পোলিত – প্রমুখ নামজাদা বিদ্বান ও বুদ্ধিজীবীদের সমসাময়িক বা সান্নিধ্যধন্য। সামাজিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দেরিদা আর বিনির্মাণ (ডিকনস্ট্রাকশন) সমার্থক। দেরিদা মূলত কাজ করেছেন ভাষা নিয়ে। ‘মানববিদ্যার চিহ্ন ও ক্রীড়া’ শীর্ষক প্রবন্ধের মাধ্যমে জাক দেরিদা বিশ্বদরবারে ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেন। ষাটের দশকে কাঠামোবাদের পরিবর্তিত রূপ উত্তর-কাঠামোবাদ তাত্ত্বিকদের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। আর এতে দেরিদার অবদানই সর্বাধিক। কিছু সমালোচকের মতে Speech and Phenomena (1967) তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অন্যান্য কাজের মধ্যে Of Grammatology, Writing and Difference, and Margins of Philosophy তার উল্লেখযোগ্য কাজ। ২০০৪ সালের ৯ অক্টোবর এই মহামনীষী প্যারিসে মৃত্যু বরণ করেন।

Read More
বিনির্মাণবাদে বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের সৃষ্টিকর্ম

বিনির্মাণবাদে বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের সৃষ্টিকর্ম

বিনির্মাণবাদকে মোটামুটি তিনটি পর্যায়ে চিহ্নিত করা যায় যথা- ক. শাব্দিক (verbal), খ. পুস্তক কেন্দ্রিক (textual) এবং গ. ভাষাতাত্ত্বিক (linguistic) এই পর্যায় তিনটিকে কবি ডিলন টমাসের ‘A Refusal to Mourn the Death by Fire of a child in London’ কবিতাটিকে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে। শাব্দিক (verbal) পর্যায়টি, ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে এস্পসনের ‘Seven Types of Ambiguity’ গ্রন্থে প্রস্তাবিত নিবিড় পাঠের (close reading) সাথে অনেক সাদৃশ্যপূর্ণ। নিবিড় পাঠ প্রস্তাবনা, কোনো রচিত পুস্তকের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও স্ববিরোধগুলোর অনুসন্ধান করে, যাকে প্রকৃষ্টভাবে শাব্দিক অনুসন্ধান বলা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ডিলন টমাসের উল্লিখিত কবিতাটির শেষ লাইন ‘After the first death

Read More
বিনির্মাণবাদ, ডিকনস্ট্রাকশন (Deconstruction)

বিনির্মাণবাদ, বিনির্মাণবাদের সংজ্ঞার্থ : বিনির্মাণবাদের বৈশিষ্ট্য গুলো লিখ?

বিনির্মাণবাদের সংজ্ঞার্থ: J.W. Bertens তাঁর ”Literary Theory: Basics” গ্রন্থে দারিদার বিনির্মাণতত্বের একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলছেন, দারিদা তাঁর বিনির্মাণতত্বে বলছেন, ভাষা প্রকৃতিগতভাবে অনির্ভরযোগ্য ব্যাপার। একটা শব্দ প্রকৃতপক্ষে যাকে রেফার করে সেটা কিন্তু ফলত শব্দের সাথে শব্দের পার্থক্য, সরাসরি কোন নির্দেশক নয়। কাজেই এই শব্দগুলো একটা ভাষিক পদ্ধতির মধ্যে কাজ করে, যা কখনই বাস্তব জগতকে স্পর্শ করে না। বাস্তবতা ভাষিক প্রকৃতি নির্ধারণ করে। একটা শব্দের থেকে আরেকটা শব্দের যে পার্থক্য যার প্রেক্ষিতে ঐ শব্দটা স্বতন্ত্র হয় তাকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হয়। তবে বিনির্মাণ তত্বের একটা বড় ফলাফল হলো, এই তত্ব মনে করে কোন শব্দের অর্থ কোন সময়ই একটা সময়ের ফ্রেমে আবদ্ধ নয়, যার প্রেক্ষিতে এটা চলমান ও পরিবর্তনশীল। দারিদা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাচন প্রক্রিয়ায় কোন পারমাণবিক বিভাজন নেই (There is no atom: Dialanguages: in Points … Interviews, 1974-94)। এর অর্থ আমরা ভাষা দিয়ে যা প্রকাশ করি তার সবটুকু বিভাজন করা সম্ভব। জীবন কী? জীবন অনেক কিছুর সমন্বয়, সম্ভবত বহু মাত্রার এক সমন্বিত দ্যোতনা। কবি রণজিৎ দাসের এক কবিতা দিয়ে দারিদার বিনির্মাণতত্বকে বোঝাতে চেয়েছেন দারিদা বিশেষজ্ঞ তপোধির ভট্টাচার্য তার “জাক দেরিদা তাঁর বিনির্মাণ” গ্রন্থে। “যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন সূর্যাস্ত, নারী, গির্জা ও গোলাপ যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন উৎসব, চাঁদ, নৌকো ও সমুদ্র যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন বিগ্রহ, ধুপ, মুদ্রা, পূজারিণী যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন পাহাড়, মেঘ, শালবন, চিঠি ও চুম্বন যা কিছু বিষণ্ণ করে, গরম ভাত, হাতপাখা, গন্ধলেবু, আদিবাসী গ্রাম যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন সার্কাস, তাঁবু, ফেরিঘাট, পাগলের হাসি যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন মায়ের ছবি, ডাকঘর, শিলাবৃষ্টি, মাঝিদের গান যা কিছু বিষণ্ণ করে, যেমন সমস্তই, হে জীবন, তোমার আনন্দ-অভিধান”। [‘যা কিছু বিষণ্ণ করে’, সন্ধ্যার পাগল, রণজিৎ দাস] কবির এই বিচিত্র ও ভিন্ন ভিন্ন অনুভবের ভেতর দিয়ে জীবনের নানা প্রকরণের উন্মেষগুলো প্রকাশিত হয়েছে নানা রঙ্গে, নানা ঢঙে। আসলেই তো জীবনের বিচিত্র রাগ, দুঃখ, মৃত্যু, বিরহ, শান্তি, আনন্দ –এসবই তো জীবনের অংশ। কবিগুরু তো বললেন, “তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা, বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে”॥ জীবনের এই বহুমাত্রিকতা, বহুঅনুভবতা আর নিত্য পরিবর্তনশীলতাই তো বিনির্মাণতত্বের সারৎসার। অধ্যাপক তপোধির ঠিকই বলেছেন, “সমস্ত অনুষঙ্গ মনে রেখে লেখা যায়, দেরিদার বিনির্মাণপন্থা আসলে সমস্ত বাচনিক, প্রতীতিগত (ধারণা সম্বন্ধীয়), মনস্ত্বাতিক, নান্দনিক, ঐতিহাসিক, নৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও পাঠকৃতি বিষয়ক দৃশ্য–প্রপঞ্চ- পরিস্থিতিকে আমুল আলোড়িত –রূপান্তরিত- পুনঃস্থাপিত করার কৃতকৌশল”(পৃ. ১২৬)। দেরিদার বি-গঠনবাদী পাঠ-প্রস্তাবনার উদ্দেশ্যও প্রায় একই রকম। দেরিদা বলেন, বি-গঠনবাদী পাঠ অবশ্যই কতগুলো সম্পর্কের দিকে লক্ষ্য রাখবে, যেগুলোর দিকে লেখক নিজে লক্ষ্য করেননি, তার ভাষা ব্যবহারের ধরন দিয়ে কী তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, আর কী চাননি… ‘বি-গঠন অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করে। (‘Of Grammatology’ পৃ:-১৫৮, ১৬৩) বিনির্মাণবাদের বৈশিষ্ট্য ১. বিনির্মাণবাদ একটি পূর্ণাঙ্গ সমালোচনা তত্ত্ব;

Read More
বিনির্মাণবাদের প্রেক্ষাপট, স্বরূপ ও পরিসর আলোচনা কর?

বিনির্মাণবাদের প্রেক্ষাপট, স্বরূপ ও পরিসর আলোচনা কর?

বিশ শতককে বলা যেতে পারে তত্ত্বচিন্তার শতক। উনিশ শতকে বা তারও আগে মানুষের চিন্তাচেতনায় বিভিন্ন প্রবণতার সূচনা হয়েছিল। তবে দুটি বিশ্বযুদ্ধ ও স্নায়ুযুদ্ধের অভিঘাত শুষে নিতে-নিতে ভাবনা-প্রস্থানগুলি প্রসারিত হলো বিচিত্র শাখা-প্রশাখায়। একুশ শতকের শূন্যদশক পেরিয়েও অব্যাহত রয়েছে জিজ্ঞাসার পালাবদল। তবু বিশ শতকই তত্ত্ববিশ্বের প্রকৃত চারণভূমি। অখণ্ড অবিভাজ্য মানববিশ্বের অধিবাসী হিসেবে যত চিনতে পারছি নিজেদের, আমাদের কৌতূহল মহাদেশের গণ্ডি অতিক্রম করে যাচ্ছে দ্রুত। নতুন নতুন তত্ত্বের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে তৃতীয় বিশ্বের অধিবাসীদের চিন্তা-চেতনার সীমান্তরেখাও মুছে গেছে কবেই। সাহিত্য ও সংস্কৃতিতত্ত্বের মাটি ও আকাশ আমূল পালটে গেছে। তারই ফসল বিনির্মাণবাদ। জে,এ কুডন তাঁর ‘Dictionary of Literary Terms’ গ্রন্থে বিনির্মাণবাদ সম্পর্কে বলেন, “একটা বই যা বলতে চায় ঠিক সেভাবে না পড়ে তাকে অন্যভাবেও পড়া যায়… বইটিতে বহু ইঙ্গিত পূর্ণ বহু কথার সমাহার থাকতে পারে, মৌলিক বিরোধ পূর্ণ কিছু কথা থাকতে পারে, কোনো ‘প্রতিষ্ঠিত’ সত্য বিরোধী মন্তব্য থাকতে পারে। এভাবে বইটি নিজেই নিজেকে ‘প্রবঞ্চিত’ করতে পারে।” অতএব, দেখা যায় বিনির্মাণবাদ এমন বিষয়ই চর্চা করে, যাতে মূল পুস্তকের অবমাননা করা বা পুস্তকটির বিরুদ্ধ পাঠ হয়। পুস্তকটিকে এমনভাবে পাঠ করা হয় যেন পুস্তকটি অভ্যন্তরস্থ বিরোধ ও অপ্রাসঙ্গিকতাগুলো তুলে ধরে পুস্তকটির আপাত ঐক্যের মধ্যে অনৈক্য খুঁজে বার করাই পুস্তকটি পাঠের প্রধান উদ্দেশ্য। এর আগের প্রজন্মের ‘নব্য-সমালোচনাবাদের’ (New criticism) উদ্দেশ্য ছিল এর বিপরীত, তাদের উদ্দেশ্য ছিল: পুস্তকটি আপাত অনৈক্যের মধ্যে ঐক্য সূত্র আবিষ্কার করা। বি-গঠনবাদের উদ্দেশ্য অনুসারে; বিনির্মাণবাদে পুস্তকটির কোনো একটি বিশেষ বিষয় – কোনো একটা নির্দিষ্ট উপমাকে নেয়া হয় এবং সেটিকেই সম্পূর্ণ পুস্তকটি মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে নেয়া হয়, এবং সে আলোকেই পুস্তকটি পাঠ করা হয়। প্রধানত ভাষাতত্ত্ব থেকেই কাঠামোবাদের উদ্ভব। ভাষাতত্ত্ব জ্ঞানের এমন একটি শাখা যা ঐতিহ্যগতভাবেই নৈর্ব্যক্তিক জ্ঞান প্রতিষ্ঠায় প্রত্যয়ী। ভাষাতত্ত্ব বিশ্বাস করে, যদি সঠিক পর্যবেক্ষণ করা যায়, সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা যায় এবং যৌক্তিকভাবে অগ্রসর হওয়া যায় তাহলে ভাষা ও বিশ্ব সম্পর্কে একটা নির্ভরযোগ্য উপসংহারে আমরা পৌঁছতে পারি। কাঠামোবাদ ভাষাতত্ত্বের দৃঢ় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিটি ধারণ করে: নির্ভরযোগ্য সত্য বিনির্মাণে কাঠামোবাদ যুক্তি, নিরীক্ষণ প্রক্রিয়ায় তথ্য নির্ভরতায় বিশ্বাস করে। তুলনায় বিনির্মাণবাদ দর্শন-ভিত্তিক। দর্শন জ্ঞানের এমন একটি শাখা, যা থেকে কোনো বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া বেশ কঠিন। দার্শনিক নীৎসের বিখ্যাত উক্তি এ প্রসঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। নীৎসে বলেন, ‘There are no facts, only interpretations’ বলা যায় জ্ঞানের বিশেষ শাখা হিসেবে দর্শন নিজেই সংশয়বাদী’ তাই সাধারণ জ্ঞানভিত্তিক ধারণা ও প্রত্যয়কে দর্শন গ্রহণ করে না। যাকে স্বতঃসিদ্ধ ধরে নেয়া হয় তাকে প্রশ্নাক্রান্ত করাই দর্শনের প্রাগ্রসরমানতার ধারা। বিনির্মাণবাদ দর্শনের এই সংশয়বাদিতার ধারক এবং এই ধারাকেই তীব্রতর করে। বৈজ্ঞানিক কোনো তথ্য-উপাত্তে নির্ভর করাকে বিনির্মাণবাদ অতি সারল্য মনে করে এবং এমন একটা মর্ষকামী বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নিয়োজিত হয় যে, কোনো কিছুই চূড়ান্তভাবে জানা সম্ভব নয়। বিনির্মাণবাদে রচনার প্রবণতা থাকে আবেগ উদ্দীপনার দিকে, প্রায়ই উচ্ছ্বসিত। আর তাদের রচনাশৈলি হয় সচেতনভাবেই জমকালো, অতি আলংকারিক। তাদের রচনাগুলোর শিরোনামও থাকে শব্দ চাতুর্য এবং কোনো সূত্র উল্লেখে পূর্ণ। রচনার মূল বিষয়ও থাকে শব্দ চাতুর্যপূর্ণ। বিনির্মাণবাদ রচনা প্রায়ই ভাষার কোনো না কোনো মৌলিক (‘material’) বিষয়ে কেন্দ্রীভূত থাকে, কোনো লেখকের ব্যবহৃত কোনো একটি উপমা (‘metaphor) বা কোনো একটি শব্দের বুৎপত্তি। সর্বোপরি বিনির্মাণবাদে নিস্পৃহতার পরিবর্তে এক ধরনের উষ্ণতা থাকে বলে মনে হয়। কাঠামোবাদীরা মনে করে ভাষাই দৃশ্যমান জগৎ সৃষ্টি করে; এই অর্থে যে, আমরা ভাষা ছাড়া বাস্তব জগতে প্রবেশ করতে পারি না। কাঠামোবাদীরা ভাষাকেই তাদের চিন্তা চেতনার কেন্দ্রে স্থান দেন। আর ভাষা হচ্ছে একটা সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা, এর উপর আমাদের নির্ভরতার গুরুত্ব সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারলে তা কোনোভাবেই কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক হতাশায় পতিত হবার কোনো অবকাশ রাখে না। বিনির্মাণবাদে অনেক বেশি মৌলবাদী কারণ তারা মনে করে, বাস্তব নিজেই পুস্তক কেন্দ্রিক। শুধু ভাষা থেকে কোনো জ্ঞান সম্ভব নয় বলে বিনির্মাণবাদীরা মনে করে। তাদের মতে, শব্দ যে সব ঈঙ্গিতকে ধারণ করে রাখার সম্ভাবনা আছে সেগুলো সব ভাসমান, অস্থির। ভাষা সম্বন্ধে বিনির্মাণবাদীদের বদ্ধমূল ধারণা হলো: ভাষা অনেকটাই তরল পদার্থের মতো, শব্দ যে সঙ্কেতগুলোকে বহন করে, সেগুলো সদা ভাসমান এবং যে-কোনো সময়ে তাদের অর্থ পিছলে যেতে পারে (slippage) বা ছলকে পড়তে পারে (‘spillage’) ভাষার এই পিচ্ছিল বিশৃঙ্খলা অননুমেয়ভাবে ভাষার সঙ্কেতকে ‘দাতার’ (giver) কাছ থেকে গ্রহীতার (receiver) কাছে সঠিকভাবে শব্দের (container) মাধ্যমে পৌঁছার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করে। ভাষা সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়, তাই শব্দের অর্থকে সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে স্থাপন করা যায় না। শব্দগুলোর যে প্রচলিত অর্থ বিদ্যমান, তা যে শতভাগ বিশুদ্ধ এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। শব্দগুলো প্রায়শ তাদের বিপরীত শব্দ দিয়ে প্রভাবিত (‘contaminated’) হয় – আমরা দিনের উল্লেখ না করে রাতকে বুঝাতে পারি না, মন্দের উল্লেখ না করে ভালোকে বুঝাতে পারি না। অনেক সময় শব্দটির নিজস্ব ইতিহাস ও তার অর্থ উদ্ঘাটনে বাধার সৃষ্টি করে। শব্দটির পুরানো অর্থ, নতুন অর্থ প্রকাশের উপর প্রভাব ফেলে। আর এসব অস্বচ্ছতা দূর না হলে আমরা শব্দটি ব্যবহার করি না। যেমন, অতি সাধারণ একটি শব্দ ‘guest’ ব্যুৎপত্তিগতভাবে ‘hostis’ শব্দটির সঙ্গে জড়িত যার অর্থ ‘শত্রু বা আগন্তুক’। ফলে, ‘guest’ বলতে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকেই বুঝায়। এরকমভাবে অনেক শব্দকে তাদের রূপকের ভিত্তিতে দৰ্শনে বা সাহিত্যে ব্যবহার করলে, তাদের অর্থ প্রকাশে অস্বচ্ছতা দেখা দেয় এবং কোনো একক অর্থ প্রকাশে তাদের ব্যবহার করা যায় না। উত্তর কাঠামোবাদ, এই ভাষাতাত্ত্বিক জটিলতার দিকেই আলোকপাত করে। কাঠামোবাদে আমরা বাস্তবকে যেভাবে গঠন ও বিন্যস্ত করি তাকেই প্রশ্ন করে, আমাদের ধারণাগুলোকে নাড়া দিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায় । প্রচলিত ধারণাকে পুনর্গঠিত, পুনর্বিন্যস্ত করে আমরা আরো নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে পারি, কাঠামোবাদ এমনি বিশ্বাস করে। বিনির্মাণবাদে তুলনায় আরো বেশি রক্ষণশীল; কারণ যুক্তি (‘reason’ ) বুদ্ধিকেই তারা অস্বীকার করে, মানুষের স্বাধীন সত্তাকে অস্বীকার করে।

Read More
মার্কসবাদী রীতি বা পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?

মার্কসবাদী রীতি বা পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?

মার্কসবাদী রীতি: সাহিত্যকে যখন ঐতিহাসিক বস্তুবাদ এর ভিত্তিতে বিচার করা হয় তখন তা হয়ে ওঠে মার্কসীয় সমালোচনা রীতি। এখানে বস্তুবাদ বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়, এটি বেশ উল্লেখযোগ্য

Read More
উত্তর-উপনিবেশবাদী রীতি বা পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?

উত্তর-উপনিবেশবাদী রীতি বা পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?

উত্তর-উপনিবেশবাদী রীতি: সাহিত্যে মানুষের উপনিবেশিক মনস্কতার দর্শন ও মনস্তত্ত্বকে চিনিয়ে দেওয়া ও তা থেকে মুক্ত করাই ছিল উত্তর-গঠনবাদী রীতির মূল উদ্দেশ্য।  উত্তর-ঔপনিবেশিকতাবাদ বলতে চিন্তা ও বিশ্লেষণের

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.