Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

চর্যাপদের ধর্মমত সম্পর্কে আলোচনা কর

চর্যাপদের ধর্মমত সম্পর্কে আলোচনা কর: বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ। কতকগুলো গানের সংকলন হলো চর্যাপদ। ‘চর্যাপদ’ একটি বৌদ্ধ পারিভাষিক শব্দ। চর্যাপদ শব্দের অর্থ যা আচরণীয় ও অনাচরণীয়, পালনীয় ও বর্জনীয়, কি করা উচিত ও কী করা অনুচিত তার নিয়মাবলি। চর্যাপদের বিষয়বস্তু হলো- বৌদ্ধ ধর্মমতে সাধনভজনের তত্ত্ব প্রকাশ। চর্যাপদগুলো রচনা করেন- বৌদ্ধ সহজিয়া গণ। নিম্নে চর্যাপদের ধর্মমত বা ধর্মতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদের যথার্থ মর্যাদা কাব্যসৃষ্টি হিসেবে। তবে তার মধ্যে একটি ধর্মমত চমৎকারভাবে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রথম চর্যাপদের ধর্মমত নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ তাঁদের ধর্মীয় রীতিনীতির নিগূঢ় রহস্য চর্যাপদের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। চর্যাপদের মাধ্যমে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যেরা গোপন তত্ত্বদর্শন ও ধর্মচর্চাকে বাহ্যিক প্রতীকের সাহায্যে ব্যক্ত করেছেন। বৌদ্ধধর্মের মহাযান শাখা কালক্রমে যেসব উপশাখায় বিভক্ত হয়েছিল তারই বজ্রযানের সাধারণ প্রণালি ও তত্ত্ব চর্যাপদে বিধৃত। মহাসুখরূপ নির্বাণলাভ’ই হলো চর্যার প্রধান সাধনাতত্ত্ব বা ধর্মমত।
বৌদ্ধ সহজিয়া বাংলার একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় যা আট থেকে এগারো শতকের মধ্যবর্তী সময়ে আত্মপ্রকাশ করে । বৌদ্ধগণের মত – পথের পার্থক্যের বজ্রযান শাখা থেকে বৌদ্ধ সহজিয়া মতবাদের উদ্ভব । এর মূল তত্ত্ব হলো : কঠোর সাধনায় মুক্তি কামনার পরিবর্তে সদ্গুরুর নির্দেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার মাধ্যমে পরম সুখ লাভ করা । এটি চিত্তের এমন এক অবস্থা যেখানে সুখ ভিন্ন অন্য কোনো বিষয়ের অস্তিত্ব থাকে না। চর্যাপদের আদি গুরু সরহপা মতান্তরে লুইপা একে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ও জনপ্রিয়তা দান করেন । কাহ্নপার পরিচয় দিন । কাহ্নপার পদসমূহের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করুন।
বৌদ্ধদের প্রধান গৌতম বুদ্ধ (৫৬৩-৪৮০ খ্রি: পূর্ব) বৌদ্ধদের উদ্দেশ্যে মত প্রকাশ করেছিলেন যে- ‘পৃথিবীতে সবকিছু শূন্যে মিলিয়ে যায়। আর শূন্যে মিলানোটাই আমাদের লক্ষ্য। নিজেকে নিজে জানতে হবে।’ (গৌতমবুদ্ধের মতামত) 
এই মতামতের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে বৌদ্ধরা নিজেদের শূন্য মিলানোর প্রচেষ্টা শুরু করে।
চর্যাপদের ধর্মমত বা ধর্মতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো! চর্যাপদ রচনার পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা করো!

হীনযান: তারা নিজেরা মোক্ষলাভ করতে চেয়েছিল। ফলে তারা অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে সাধনা করতে শুরু করে।

মহাযান: তারা সবাইকে নিয়ে মোক্ষলাভ করতে চায়। তাদের মতে শূন্যতা ও করুণার মিলনে বোধিচিত্ত উৎপন্ন হয়। আর সেই বোধিচিত্ত লাভের মধ্য দিয়ে উপনীত হওয়া যায় বোধিসত্ত্বাবস্থায়, তারপর ক্রমে বুদ্ধত্ব লাভ হয়। মহাযানদের আবার দুটি ধারা। যথা;
বজ্রযান: তারা অনুষ্ঠান করত, নাম জপ করে তারা সাধনা বজায় রাখল।

সহজযান: বৌদ্ধ সহজযান পন্থিকে সহজিয়া বলা হয়। তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন পরিবর্তনের ধারায় সহজিয়াদের উৎপত্তি। স্বদেহ কেন্দ্রিক সহস্থপন্থায় সাধনা করত বলে এদের সহজীয়া বলা হয়। সহজিয়া তাত্ত্বিক চিন্তা ধারায় প্রকাশিত বলেই ধর্মসাধনায় দেহকে বাদ দেননি। কায়িক, মানবিক এবং আধ্যাত্মিক কোনো পথকেই অস্বীকার করেননি। তাদের মতে সমস্ত সত্য দেহের মধ্যেই অবস্থিত। সেই সত্যই ‘সহজ’। তাদের মতে, এই দেহই সত্যের মন্দির, সকল তত্ত্বের বাহন। ইহাকেই যন্ত্র করিয়া ইহার ভিতরেই সকল তত্ত্ব আবিষ্কার করিয়া ইহার ভিতরের শিব শক্তির মিলন ঘটাইতে হবে। তারার মতে নারীদের সাথে শারীরিক মিলন না করলে  দেহ শুদ্ধ হবে না। তবে এ মিলনের মধ্যে জাগতিক কোনো সুখ – দুঃখ থাকবে না। থাকলে তা সাধনা হবে না।

চর্যাপদের ধর্মমত বা ধর্মতত্ত্ব ও সাধনতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো! চর্যাপদ রচনার পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা করো!
তান্ত্রিক কায়া সাধনার আর একটি দিক হচ্ছে দেহের নাড়িকে সংযত করে সাধনার পথে অগ্রসর হওয়া। মেরুদন্ডের বাঁ দিকের একটি নাড়িকে ‘ইড়া’ বলা হয়। মেরুদন্ডের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত নাড়িকে ‘পিঙ্গলা’ বলা হয়। এই ‘ইড়া’, ‘পিঙ্গলা’ যথাক্রমে শিব ও শক্তিরূপে কল্পিত হয়। এদের মধ্যবর্তী হচ্ছে সুষুম্না। এই ইড়া পিজিলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অপান ও প্রাণ বায়ুকে যোগ সাধনার দ্বারা সুষুম্নাতে এনে মিলিত করতে হবে। তারপর সেই সুষুম্না পথে তাকে ঊর্ধ্বাভিমুখে পরিচালিত করে সহস্রারে বা মহাসুখ চক্রে নিয়ে যেতে হবে। এখানেও যাত্রাপথে সেই ষটচক্র বা চারচক্র অতিক্রম করার ব্যাপার আছে।
তান্ত্রিকগণ বিভিন্ন দেহের অংশে কয়েকটি চক্রের নির্দেশ করেছেন। যেমন:
১. গুহ্যদেশ ও জননেন্দ্রিয়ের মধ্যভাগে মূলাধার চক্র,
২. জননেন্দ্রিয়ের মূলে স্বাধিষ্ঠান চক্র,
৩. নাভিতে মণিপুর চক্র,
৪. হৃদয়ে অনাহত চক্র,
৫. কন্ঠে বিশুদ্ধ চক্র,
৬. তালুতে আজ্ঞা চক্র ও
৭. মস্তিষ্কে সহস্রার।
হিন্দুতন্ত্রের অনুকরণে বৌদ্ধতন্ত্রেও চক্র কল্পিত হয়েছে। তবে এখানে চক্রসংখ্যা ছয় নয়, চক্রসংখ্যা চার। যেমন:
১. নাভিতে নির্মাণচক্র (মানে জননেন্দ্রিয় থেকে বাড়ি পর্যন্ত নির্মণিচক্র)
২. হৃদয়ে ধর্মচক্র ৩. কন্ঠে সম্ভোগ চক্র ও
8. মস্তিষ্কে মহাসুখ চক্র।
তন্ত্র সাধনায় এই তিন নাড়ি চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নির গুণ বিশিষ্ট । তন্ত্র সাধকদের কাছে এগুলো যথাক্রমে গঙ্গা, যমুনা আর সরস্বতী নামেও পরিচিত ও শ্রদ্ধেয়।
সহায়ক গ্রন্থ:
১. মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা (সম্পাদিত): চর্যাগীতিকা
২. গোপাল হালদার: বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা (১ম খণ্ড)
৩. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্: বাংলা সাহিত্যের কথা
৪. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়: Origin and Development of Bengali Language
৫. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (১-২ খণ্ড)
৬. দীনেশচন্দ্র সেন: বঙ্গভাষা ও সাহিত্য
৭. সুকুমার সেন: বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (১-২খণ্ড)
৮. মাহবুবুল আলম: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
৯. ড. সৌমিত্র শেখর: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

অস্তিত্ববাদ অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা

Read More
নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

“বিধির লিখন যায় না খনন” – বিধি অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা যার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তা কখনো খন্ডন করা যায় না সর্ব প্রকার চেষ্টা বা সাধনার

Read More
গবেষণার পর্ব বা গবেষণার পর্যায় কয়টি ও কী কী? আলোচনা করো

গবেষণার পর্ব বা গবেষণার পর্যায় কয়টি ও কী কী? আলোচনা করো

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসার সঠিক সমাধান ও অনুসন্ধানই হলো গবেষণা। গবেষণার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা এবং মানুষের

Read More
গবেষণা পদ্ধতি কাকে বলে? গবেষণা পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী? গবেষণার বৈশিষ্ট্য, গবেষণা পদ্ধতি ও কৌশল, গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, সামাজিক গবেষণার পদ্ধতি

গবেষণা পদ্ধতি কাকে বলে? গবেষণা পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী? গবেষণার বৈশিষ্ট্য, গবেষণা পদ্ধতি ও কৌশল, গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, সামাজিক গবেষণার পদ্ধতি

গবেষক যখন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে একটি সুশৃঙ্খল কর্মপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে, তখন তাকে গবেষণা পদ্ধতি বলে। গবেষণা কোনো বিক্ষিপ্ত ও

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.