বাংলা উপন্যাসের উদ্ভব ও বিকাশ: বাংলা সাহিত্যে উপন্যাস রচনার যাত্রা শুরু হয়েছিল উনিশ শতকের শুরুর দিকে। প্রথমদিকে, উপন্যাস রচনার যে চেষ্টাগুলি হয়েছিল, সেগুলি যথাযথ উপন্যাসের রূপ পায়নি। তবে এই প্রচেষ্টাগুলোই বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস শাখার ভিত্তি তৈরি করেছিল।
প্রথম প্রচেষ্টায় ১৮২৩ সালে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় “কলিকাতা কমলালয়” নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যা উপন্যাসের প্রচেষ্টা হিসেবে গণ্য হলেও প্রকৃতপক্ষে উপন্যাসের কাঠামো অর্জন করতে পারেনি। এরপর ১৮৩২ সালে তিনি “নববিবি বিলাস” নামক আরেকটি রচনা করেন। এটিও উপন্যাস না হয়ে কিছুটা সামাজিক রম্যরচনা ও সমালোচনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলা উপন্যাস রচনায় দ্বিতীয় প্রচেষ্টা করেন হ্যানা ক্যাথেরিন ম্যুলেন্স। ১৮৫২ সালে তার লেখা “ফুলমণি ও করুণার বিবরণ” প্রকাশিত হয়। এটি গল্পের আকারে লিখিত হলেও উপন্যাসের পূর্ণাঙ্গ বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারেনি।
অবশেষে, ১৮৫৮ সালে প্যারিচাঁদ মিত্র “আলালের ঘরে দুলাল” রচনা করেন, যা বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে পরিচিতি পায়। “টেকচাঁদ ঠাকুর” ছদ্মনামে লেখা এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত হলেও এর কাঠামোগত দুর্বলতা থাকায় এটিকে সার্থক উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।
বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক উপন্যাসের মর্যাদা পায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দুর্গেশনন্দিনী” (১৮৬৫)। বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা উপন্যাসে প্রথমবারের মতো একটি কাহিনিকে নাটকীয় ও মনোমুগ্ধকর আঙ্গিকে প্রকাশ করেন এবং পাঠকদের মধ্যে এর গভীর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হন। এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের একটি সার্থক শাখার উন্মোচন ঘটে।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী ঔপন্যাসিক ছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী, যিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় বোন ছিলেন। ১৮৭৬ সালে তিনি “দীপনির্বাণ” নামক উপন্যাসটি রচনা করেন, যা তার সাহিত্যিক প্রতিভার প্রতিফলন এবং সমকালীন সমাজে নারীর ভূমিকার প্রকাশ ঘটায়।