বাংলা চিত্রকলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা চিত্রকলার অগ্রপথিকদের মধ্যে একজন এবং বাংলা আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য। তাঁর শিল্পচর্চা মূলত জীবনের শেষ পর্যায়ে শুরু হলেও, স্বতন্ত্র ধারা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে তিনি চিত্রকলায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্মে পাশ্চাত্য প্রভাবের পাশাপাশি ভারতীয় ঐতিহ্য, দর্শন এবং নিজস্ব মননশীলতা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রকাশ পেয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলায় কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম বা কাঠামোর বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না। তাঁর চিত্রকর্মে বিমূর্ত ও সুররিয়ালিজমের প্রভাব দেখা যায়। একে বলা যেতে পারে তাঁর কাব্যিক মননের শিল্পরূপ। ছবিতে রেখার বহুবিধ ব্যবহার, অদ্ভুত আকার এবং মিশ্র রঙের সংমিশ্রণে রবীন্দ্রনাথ এমন এক ধরনের চিত্রধারা সৃষ্টি করেছেন যা সেই সময়ের প্রচলিত ধারা থেকে ভিন্ন। তাঁর ছবিতে প্রাণী, মুখাবয়ব, প্রকৃতি, অদ্ভুত সব কল্পনাপ্রসূত চিত্র ভাস্বর হয়ে উঠেছে।
রবীন্দ্রনাথ মূলত যেভাবে ছবি আঁকতে শুরু করেন তা বেশ আকর্ষণীয়। লেখালেখির সময় কলমের আঁচড় থেকে অবচেতনভাবে যে আঁকিবুঁকি সৃষ্টি হতো, তা থেকেই তাঁর চিত্রচর্চার শুরু। পরবর্তী সময়ে সেই অচেতন রেখাগুলোই রূপ নেয় অসাধারণ ছবিতে। এভাবেই রবীন্দ্রনাথ চিত্রকলায় স্বতন্ত্র এক ধারার জন্ম দেন, যা তাঁর ব্যক্তিত্ব ও সৃজনশীলতা প্রকাশের একটি নতুন মাধ্যম হয়ে ওঠে।
তাঁর শিল্পকর্ম ভারতীয় আধুনিক চিত্রকলায় একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব সৃষ্টি করেছে এবং তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তাঁর চিত্রকর্ম নিয়ে নানা প্রদর্শনী যেমন ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়, তেমনই তাঁর ছবিগুলো নিয়ে গবেষণাও হয়েছে। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, চিত্রকলার ভাষাও কাব্যের মতোই সার্বজনীন এবং গভীর অভিব্যক্তির একটি মাধ্যম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকলার অবদান বাংলা চিত্রশিল্পের ইতিহাসে এক মাইলফলক। তাঁর চিত্রকর্ম শুধু বাংলার আধুনিক চিত্রকলার বিকাশেই সহায়ক হয়নি, তা আন্তর্জাতিক শিল্পমঞ্চেও বাংলা চিত্রকলার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।