Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

সোনার তরী কাব্যের চিত্রকল্প প্রসঙ্গে লিখুন

সাহিত্যালোচনায় চিত্রকল্প একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ। চিত্রকল্পের সমার্থক শব্দ হলো রূপকল্প। তুলনামূলকভাবে কম বা ক্ষুদ্র অর্থে ব্যবহৃত হয় কল্প শব্দটি— ‘ঈষদূণকল্পবৃদেশ্যদেশীয়ঃ চিত্রের থেকে একটু কম বা চিত্রের মতো অর্থ প্রকাশক শব্দ চিত্রকল্প। সুদক্ষ শিল্পীরা তাঁদের তুলি দিয়ে পটে বিভিন্ন চিত্র আঁকেন, ভাস্করেরা শিলাফলক বা কাঠে সূক্ষ্ম তাক্ষণে বিভিন্ন রূপ ফুটিয়ে তোলেন। কবি ও সাহিত্যিকেরা শব্দ দিয়ে এমন চিত্র ও রূপ আঁকেন, যা পাঠকের মানসপটে প্রকৃতি তথা নিসর্গ এবং অন্তর দিয়ে প্রতিফলিত হয়।

এক্ষেত্রে স্বভাবোক্তি, সমাসোক্তি, রূপক, ধ্বন্যুক্তি জাতীয় অলংকার ও শব্দকলা কবি-সাহিত্যিককে সহায়তা করে। বাকপতি ও কাব্যকলার পণ্ডিত রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী কাব্যের চিত্রকলা নিয়ে আলোচনাই আমাদের উদ্দেশ্য।

এই আলোচনায় প্রথমে আমরা সোনার তরী কাব্যের প্রথম কবিতা বা নামভূমিকায় থাকা সোনার তরী কবিতাটি নিতে পারি। সোনার তরী কবিতা থেকে চিত্রকল্পের উদাহরণ উদ্ধৃত করার আগে রবীন্দ্রনাথের একটি পত্রাংশ উল্লেখ করছি: “ছিলাম তখন পদ্মার বোটে। জলভারযুক্ত কালোমেঘ আকাশে, এপারের ছায়াঘন বৃক্ষশ্রেণির মাঝে গ্রামগুলি, বর্ষার পূর্ণ পদ্মা খরবেগে বয়ে চলেছে, মাঝে মাঝে পাক খেয়ে ছুটছে ফেনা। নদী অকালে কূল ছাপিয়ে চরের ধান দিনে দিনে ডুবিয়ে দিচ্ছে…ভরা পদ্মার উপর ওই বাদল দিনের ছবি সোনার তরী কবিতায় অন্তরে প্রচ্ছন্ন ও ছন্দে প্রকাশিত।”

রবীন্দ্রনাথ পদ্মাপারের গ্রাম দেখেছিলেন, সে গ্রাম ছিল ছায়াবৃত পত্রপুঞ্জের ভেতর, যার সঙ্গে মিলেছিল শাওনের কালো মেঘের আবরণ; কবি শব্দ ও ছন্দে সেই ছবি আঁকলেন, যেন পটে আঁকা। যৌবনের উচ্ছ্বল নদীর প্রবাহমান স্রোতের রেখা ও জলাবর্তবেষ্টিত ভূমিভাগে বসে কবির চোখ পরপারে নিবদ্ধ ছিল। তাঁর লেখনীতে চিত্রকল্প প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে—

“একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
চারিদিকে বাঁকাজল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুচ্ছায়া মসী মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা
এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।”

কিংবা—

“শ্রাবণ গগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি”

—এই পঙক্তির চিত্রকল্পও কম চমৎকার নয়।

এবার আমরা “পরশপাথর” থেকে চিত্রকল্পের উদাহরণ নেব। ক্ষ্যাপার হারানিধি যখন পরশপাথর খুঁজতে যায়, তখন দিনান্তের সূর্য মালিন্যে ঋণাত্মক এবং অস্তাচলের দিকে ধাবমান সূর্যকিরণের ঊর্ধ্ব আকাশ সোনালি রঙে মিশে গেছে। জলাধি সুবর্ণময়, আর পশ্চিম দিক থেকে সোনালি স্বপ্নে মগ্ন বধূর মতো সেই দৃশ্য মূর্ত হয়েছে।

“তখন যেতেছে অস্তে মলিন তপন
আকাশ সোনার বর্ণ সমুদ্র গলিত স্বর্ণ
পশ্চিমদিগ্বধূ দেখে সোনার স্বপন।”

এই চিত্রকল্প অত্যন্ত সুন্দর। চিত্রধর্মশালিনী এই বর্ণনা কেবল চিত্রায়ণের জন্য নয়, এটি সন্ন্যাসীর ব্যর্থ পরিশ্রমের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে, যা সন্ধ্যার কনককান্তির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

রবীন্দ্রনাথের “যেতে নাহি দিব” কবিতার ক্ষান্ত বর্ষণ শরতের খরবহা ভরা গঙ্গা এবং শুভ্র খণ্ডমেঘের চিত্রকল্প নিম্নরূপ—

“বহে খরবেগ
শরতের ভরাগঙ্গা শুভ্র খণ্ডমেঘ
মাতৃদুগ্ধ পরিতৃপ্ত সুখনিদ্রারত
সদ্যোজাত সুকুমার গোবংশের মতো
নীলাম্বরে শুয়ে।”

“বসুন্ধরা” কবিতায় চিত্রকল্পের অসাধারণ ব্যবহার দেখতে পাই। এখানে একটি সমুদ্রতীরবর্তী গ্রামের চিত্র আঁকা হয়েছে, যেখানে ধীবর সম্প্রদায় জাল শুকাচ্ছে, তরী ভাসছে, পাল ওড়াচ্ছে, এবং সংকীর্ণ নদী আঁকাবাঁকা পথে বয়ে চলেছে—

“সমুদ্রের তটে ছোটো ছোটো নীলবর্ণ পর্বত সংকটে
একখানি গ্রাম, তীরে শুকাইছে জাল জলে ভাসিতেছে তরী, উড়িতেছে পাল
জেলে ধরিতেছে মাছ, গিরিমধ্য পথে
সংকীর্ণ নদীটি চলি আসে কোনো মতে
আঁকিয়া বাঁকিয়া।”

একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো সন্ধ্যাকালের দৃশ্য। প্রান্তরে ম্লানালোকে গাভীরা ঘরে ফিরছে, গোষ্ঠ থেকে ধুলো উড়ছে, আর দূরের গাছে ঘেরা গ্রাম থেকে ধোঁয়া উঠছে। সেই সময়ের একটি চিত্র—

“হেরি ঘরে সম্মুখেতে সন্ধ্যার কিরণে
বিশাল প্রান্তর যবে ফিরে গাভীগুলি
দূরে গোষ্ঠে মাঠপথে উড়াইয়া ধূলি
তরুঘেরা গ্রাম হতে উঠে ধূমলেখা
যবে চন্দ্র দূরে যায় দেখা।”

রবীন্দ্রনাথের চিত্রায়ণ নৈপুণ্যের শেষ উদাহরণ “নিরুদ্দেশ যাত্রা” থেকে নেওয়া। কুলহারা সমুদ্রের গভীর নীল জলে দ্রুতঘনায়মান রজনি যেন পাখা মেলে আসছে, সায়ন্তনী আকাশের সোনালি আলো কালো রাত্রির আবরণে ঢেকে যাচ্ছে—

“আঁধার রজনি আসিবে এখনি
মেলিয়া পাখা
সন্ধ্যা আকাশে স্বর্ণ আলোক
পড়িবে ঢাকা।”

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, যিনি ‘বনফুল’ ছদ্মনামে অধিক পরিচিত, বাংলা সাহিত্যের এক বহুমুখী প্রতিভা। ১৯ জুলাই ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণকারী এই লেখক, নাট্যকার, কবি, এবং চিকিৎসক একাধারে সমাজের

Read More

মদনমোহন তর্কালঙ্কার এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মদনমোহন তর্কালঙ্কার (জন্ম: ১৮১৭ – মৃত্যু: ৯ই মার্চ, ১৮৫৮) ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি পণ্ডিত, যিনি বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষা

Read More

নীলদর্পণ নাটকের সাহিত্যিক মূল্যের চেয়ে সামাজিক মূল্য বেশি- আলোচনা কর

ভূমিকা: বাংলা নাটকের কয়েকজন বিশিষ্ট নাট্যকারের মধ্যে দীনবন্ধু মিত্র অন্যতম, কারো কারো মতে বাংলা নাটকের প্রাথমিক যুগে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার। মাইকেল মধুসূদন দত্ত যেমন পৌরাণিক ও

Read More

অর্ধ-স্বরধ্বনি কী বা অর্ধ-স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণসহ বাংলা অর্ধ-স্বরধ্বনির বৈশিষ্ট্য লিখ?

অর্ধ-স্বরধ্বনির সংজ্ঞার্থ নিরূপণ করে ব্রিটিশ ধ্বনিবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল জোনস বলেছেন, “Semi – vowel : a voiced gliding sound in which the speech organs start by producing

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.