Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের মর্ত্যমমতা ও মানবপ্রীতির পরিচয় দাও

পৃথিবীর বাস্তবিক সৌন্দর্য রবীন্দ্রনাথ ‘সোনার তরী’ পর্বে এসে আবিষ্কার করেন। জমিদারির কাজের জন্য তাঁকে পদ্মাপারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আসতে হয়েছিল। শিলাইদহ, পতিসর, কালীগ্রাম, সাজাদপুর প্রভৃতি স্থানে থাকার সময় প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। বাল্যকালে যেমন তিনি ভৃত্য হিসেবে প্রকৃতি থেকে দূরে ছিলেন, বড়ো হয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর অন্তরের অনুভূতি ‘ছিন্নপত্রের’ বিভিন্ন পত্রাবলিতে প্রকাশিত হয়েছে এবং ‘সোনার তরী’র কবিতাগুলিতেও ফুটে উঠেছে।

‘ছিন্নপত্রে’ প্রকৃতি প্রীতির পরিচয় দিয়ে বলেছেন—“পৃথিবী যে কী আশ্চর্য সুন্দরী এবং কী প্রশান্ত প্রাণে এবং গম্ভীরভাবে পরিপূর্ণ—এইখানে না এলে মনে পড়ে না।” ‘সোনার তরী’র ‘সমুদ্রের প্রতি’ কবিতাতে কবি ঘোষণা করেছেন ‘আমি পৃথিবীর শিশু’। এই কবিতাতে কবি বলেছেন সমুদ্রের বিরাট জঠরে পৃথিবীর মধ্যে তিনি লক্ষ কোটি বর্ষ ধরে অবস্থান করেছেন—

“মনে হয় যেন মনে পড়ে

যখন বিলীনভাবে ছিনু ওই বিরাট জঠরে

সেই জন্ম পূর্বের স্মরণ

গর্ভস্থ পৃথিবী ‘পরে………….

আমায়ে ফিরায়ে লহো অয়ি বসুন্ধরে

কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে

বিপুল অঞ্চল তলে। ওগো মা মৃন্ময়ী

…………………….

……………

এ বৃক্ষের কাছে-

সমুদ্র মেঘলা পরা তব কটি দেশ;”

পৃথিবীর মাটিতে লীন থেকে কবি কতবার সূর্যমণ্ডল প্রদক্ষিণ করেছেন তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। রবীন্দ্রনাথের উক্তি—

“……আমার পৃথিবী তুমি

বহু বর্ষের, তোমায় মৃত্তিকা সনে

আমারে মিশায়ে লয়ে অনন্ত গগনে

অশ্রান্ত চরণে।”

পৃথিবীর প্রতি প্রীতি, মর্ত্য ধরিত্রীর প্রতি এই মমত্ব রবীন্দ্রনাথের লেখনীতে রোমান্টিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বসুন্ধরা কখনও জননী যার স্নেহময় ক্রোড়ে যাওয়ার জন্য কবির বাসনা, কখনও রূপবতী প্রিয়া যার সমুদ্র মেখলিত কটি দেশ কবি নিজ বক্ষের নিবিড় বন্ধনে বাঁধতে চেয়েছেন—

“ইচ্ছা করে মনে মনে

স্বজাতি হইয়া থাকি সর্ব লোক সনে

দেশে দেশান্তরে।”

‘পরশপাথর’ কবিতায় ক্ষ্যাপা মাটির পৃথিবী থেকে অমর্ত্য জগতের পরশপাথর খুঁজতে গিয়ে যে ব্যর্থতা প্রকাশিত হয়েছে, এর মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ মর্ত্যজগতের গুরুত্ব প্রদর্শন করেছেন।

‘বৈক্ষ্ণব কবিতা’য় স্বর্গলোকের দেবতাকে ধুলো-বালির পৃথিবীর মানুষের সমাসনে বসিয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর মর্ত্য প্রিয় মানসের পরিচয় রেখেছেন—

“দেবতারে যাহা দিতে পারি, দিই তাই

প্রিয়জনে-প্রিয়জনে যাহা দিতে পাই

তাই দিই দেবতারে; আর পাব কোথা।

দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা।”

পদ্মা অঞ্চল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মর্ত্য পৃথিবীর বিশালতার পরিচয় ঘটিয়েছে, যেমন সাধারণ নর-নারীর সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছে। জমিদারির প্রয়োজনে শিলাইদহ, পতিসর, কালীগ্রাম, শাজাদপুর প্রভৃতি অঞ্চলে এসে কবি গ্রামীণ বাংলার পল্লির মানুষের প্রকৃত পরিচয় পান।

‘সোনার তরী’ কবিতার প্রসঙ্গে চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতে পদ্মাতীরবর্তী চাষিদের কথা উল্লেখ আছে—“বর্ষার পরিপূর্ণ পদ্মা খরবেগে বয়ে চলেছে….. কাটা ধানে বোঝাই চাষিদের ডিঙি নৌকা……এই অঞ্চলে এই চরের ধানকে বলে জলি ধান। আর কিছু দল হলেই পাকত।”

‘বসুন্ধরা’ কবিতায় কবি জেলেদের জীবনের চিত্র এঁকেছেন—

“একখানি গ্রাম, তীরে, শুকাইছে জাল।

জলে ভাসিতেছে তরী উড়িতেছে পাল

জেলে ধরিতেছে মাছ।”

‘মানস-সুন্দরী’ কবিতায় পদ্মাতীরের গ্রামের সূর্যাস্ত, রাতের আসা, পদ্মার শেষ ঘাট ভেবে বালিকা বধূর ঘরে ফেরা, নদী তীরে বৃদ্ধ কৃষকের জীর্ণ কুটীরে সন্ধ্যা দীপের জ্বলা ও নিভে যাওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে—

“রজনি গভীর হল, দীপ নিবে আসে

পদ্মার সুদূর পারে পশ্চিম আকাশে

কখন বালিকাবধূ চলে গেছে ঘরে

কখন নিবিয়া গেছে—কিছুই না জানি।”

এ সবই কবির পৃথিবীর মাটি ও মানুষের প্রতি অন্তরের মমত্বদ্যোতনার প্রকাশ।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

মোহিতলাল মজুমদার এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মোহিতলাল মজুমদার (জন্ম: ২৬ অক্টোবর, ১৮৮৮ – মৃত্যু: ২৬ জুলাই, ১৯৫২) বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি, সাহিত্য সমালোচক এবং প্রবন্ধকার। তিনি তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টি,

Read More

রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্মঃ ২১ ডিসেম্বর, ১৮২৭— মৃত্যুঃ ১৩ মে, ১৮৮৭) বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং

Read More

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে কোন পত্রিকার মাধ্যমে? বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রবক্তা কে? বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের স্লোগান কী ছিল?

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারবিরোধী একটি প্রগতিশীল আন্দোলন। ১৯২৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হুসেনের নেতৃত্বে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামে

Read More

কোন চিত্রশিল্পী পটুয়া নামে খ্যাত? চিত্রশিল্পী পটুয়া কামরুল হাসান

চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান ‘পটুয়া’ নামে খ্যাত। কামরুল হাসান (২ ডিসেম্বর ১৯২১ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮) প্রখ্যাত বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী। তিনি ড্রইং-এ দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বব্যাপী সুনাম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.