Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

নিরুদ্দেশ যাত্রা কবিতাটির ভাববস্তু বিশ্লেষণ করো এবং ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’ কবিতাটির নামকরণের তাৎপর্য

রবীন্দ্র কাব্যে যে দুই বিপরীতমুখী প্রবণতা বিদ্যমান, কবি নিজেই সেই বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবজীবনের প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ তাঁকে বিশ্বের প্রত্যক্ষ জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হতে আহ্বান জানায়। কবি সেই আহ্বানে সাড়া দেন এবং তাঁর মনের গভীরে প্রোথিত মর্ত্যপ্রীতি ও মানবপ্রীতিকে কাব্যসৃষ্টির মাধ্যমে প্রকাশ করেন। কিন্তু কবির মনে আরও একটি গভীর আকাঙ্ক্ষা রয়ে গেছে, সেটি হলো নিরুপাধি সৌন্দর্য উপলব্ধির আকাঙ্ক্ষা। এই গভীর পিপাসা তাঁকে মর্ত্য-ধরণীর বন্ধন ছিন্ন করে কল্পনার ডানায় ভর দিয়ে পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের আদর্শলোকে অভিসারী হতে অনুপ্রাণিত করে। ‘সোনার তরী’ কাব্যেও কবির এই দুই বিপরীতমুখী প্রবণতার পরিচয় মেলে। ‘সমুদ্রের প্রতি’, ‘বসুন্ধরা’, ‘যেতে নাহি দিব’ প্রভৃতি কবিতায় কবির প্রবল মর্ত্যপ্রীতি প্রকাশিত হয়েছে, আর কাব্যের শেষ কবিতা ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’য় প্রবল হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যের নিরুদ্দেশ আকাঙ্ক্ষা।

কবির যাত্রা পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের অভিমুখে স্বর্ণতরণীতে। সেই তরণীর মোহিনী নাবিকার কাছে তিনি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেছেন। প্রভাতে যাত্রারম্ভে তাঁর মন আশায় পূর্ণ ছিল, মনে হয়েছিল, ‘চঞ্চল আলো আশার মতন কাঁপিছে জলে।’ সহযাত্রিণী নাবিকার কাছ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি না পেলেও তাঁর নীরব হাসিতে ভরসা পেয়েছিলেন।

অনেক সময় কেটে গেল, তরঙ্গক্ষুদ্ধ সমুদ্রের উপর দিয়ে কবি বহু পথ পাড়ি দিলেন। কখনও নিরাশায় তিনি পীড়িত হয়েছেন, কখনও আশায় উৎসাহিত হয়েছেন। আশা-নিরাশায় আন্দোলিত চিত্তে তিনি বারবার প্রশ্ন করেছেন, জানতে চেয়েছেন পরপারে কী আছে। কিন্তু কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি, শুধু নীরব হাসিতে আশ্বাস পাওয়া গেছে।

এখন সূর্য অস্তাচলগামী, রক্তিম আলোয় আকাশ ও সমুদ্র রাঙা হয়ে উঠেছে। দিনাবসানের চিত্রটি অপূর্বভাবে আঁকা হয়েছে, প্রাকৃতিক চিত্রের সঙ্গে মিশেছে কবির নৈরাশ্যপীড়িত মানসিকতার কারুণ্য। রাত্রি আসন্ন, কিন্তু কূলের চিহ্ন দেখা যায় না। যেখানে কবি পৌঁছাতে চান, সেই নিরুপাধি সৌন্দর্যলোকের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাঁর মনে তীব্র সংশয় জেগেছে। অন্ধকার গাঢ়তর হলে সঙ্গিনী নাবিকার মুখের হাসিটুকুও চোখের আড়ালে চলে যাবে। তখন ভরসাহীন সংশয় কবির পক্ষে সহ্য করা দুরূহ হবে।

সমগ্র কবিতায় কবি পরিচিত জগৎ থেকে এক কল্পিত জগতে উত্তীর্ণ হওয়ার তীব্র বাসনা প্রকাশ করেছেন। সেই বাসনা সংশয়ের মেঘে আচ্ছন্ন। একদিকে আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা, অপরদিকে সংশয় ও নিরাশার বেদনা কবিতাটিকে পরস্পর বিজড়িত করে এক অভিনব সমাবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও কোনো অজ্ঞাত জগতে পৌঁছানোর জন্য কবি ব্যাকুল; এই ব্যাকুলতাই কবিতাটির মূল সুর। পরিচিত জগৎ থেকে সুদূরে যাত্রার তীব্র আকাঙ্ক্ষাই কবিতাটির কেন্দ্রীয় ভাব। কবির কাম্য সেই জগতের প্রকৃত রূপ কী, তা কবির কাছে স্পষ্ট নয়। যদি তাকে পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের জগৎ বলা যায়, তবে প্রশ্ন জাগে যে সেই জগৎ আয়ত্ত করা সম্ভব কিনা। যা প্রত্যক্ষ নয়, সুপরিজ্ঞাত ‘নিরুদ্দিষ্ট’ বা ‘নিরুদ্দেশ’ জাতীয় শব্দ তার সম্পর্কেই ব্যবহার করা যায়। কবি তাঁর কল্পনার পরিপূর্ণ সৌন্দর্যজগৎ সম্পর্কে যথার্থভাবেই ‘নিরুদ্দেশ’ শব্দটি প্রয়োগ করেছেন এবং এই যাত্রাকে ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’ নামে অভিহিত করেছেন। কবিতার কেন্দ্রীয় ভাব এই নামকরণে যথাযথভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

প্রমথ চৌধুরী এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

প্রমথ চৌধুরী (৭ আগস্ট ১৮৬৮ — ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬) বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি প্রাবন্ধিক, কবি ও ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিত। তার পৈতৃক নিবাস বর্তমান

Read More
সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

অস্তিত্ববাদ অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা

Read More
নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

“বিধির লিখন যায় না খনন” – বিধি অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা যার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তা কখনো খন্ডন করা যায় না সর্ব প্রকার চেষ্টা বা সাধনার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.