Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

যেতে নাহি দিব কবিতার আরম্ভ অংশের রসানুগ আলোচনা করো

‘যেতে নাহি দিব’ কবিতার বাহ্যিক রূপে দুটি স্পষ্ট স্তর রয়েছে। প্রথম স্তরে, কবি তার ব্যক্তিজীবনের একটি বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। দ্বিতীয় স্তরে, সেই বিশেষ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বিশ্বজগতের চিরন্তন সত্যে উপনীত হয়েছেন। যদিও কবিতার মূল বার্তা চিরন্তন সত্যকে প্রকাশ করে, কবিতার প্রথম অংশটি বাস্তবিকতা, প্রত্যক্ষতা ও রসময়তার দিক থেকে অসাধারণ, এ কথাটি স্বীকার করতেই হবে। কবিতার সূচনা বিদায়ের আয়োজনের বর্ণনায় হয়েছে—‘দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি’। যখন বিশ্বপ্রকৃতি মধ্যাহ্নের বিশ্রামে মগ্ন, তখন প্রবাসযাত্রীর গৃহে বিদায়ের আয়োজনের বর্ণনায় সবার ব্যস্ততা এবং প্রকৃতির স্থিরতার বৈপরীত্যে এক করুণ রস সৃষ্টি হয়। প্রবাসযাত্রীর গৃহিণীর মমতার যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, তা হাস্যরসে মিশ্রিত হলেও অন্তরালের অশ্রুর আভাস করুণ রসকে আরও গভীর করে তোলে। এক সময়ে প্রাচীন আলংকারিক ও রসসমালোচকরা হাস্য এবং করুণ রসের বিরোধিতার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, মানুষ সহজেই হাসতে হাসতে কাঁদতে পারে। রবীন্দ্রনাথের ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতাটি এ বিষয়ে দৃষ্টান্ত হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।

হাস্য এবং করুণ রসের মধ্যে বিরোধ নেই, এমন প্রমাণ বিদেশী সাহিত্যেও প্রচুর রয়েছে। Dickens ও Lawrence হাস্য এবং করুণ রসকে সহজেই মিশিয়েছেন। বঙ্কিমচন্দ্র ‘কৃষ্ণকান্তের উইলে’-এ কোকিলের কুহুরব নিয়ে হাসতে হাসতে কেঁদেছেন এবং পাঠককেও কাঁদিয়েছেন। ‘যেতে নাহি দিব’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথও প্রবাসযাত্রীর যাত্রার আয়োজনের বিশদ বর্ণনায় কিছুক্ষণ পাঠককে হাসিয়ে, পরে বিশ্বজনীন এক করুণ বেদনায় তাকে কাঁদিয়েছেন।

কন্যার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ‘চলিতে চলিতে পথে’ পিতার হৃদয়ে যে গভীর বেদনাময় অনুভূতি জেগেছিল, তার পরিচয় পাওয়া যায়।

প্রবাসযাত্রী পিতাকে শিশুকন্যা বলেছিল, ‘যেতে আমি দিব না তোমায়’। সেই নিষেধ উপেক্ষা করেই পিতা কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু শিশুকণ্ঠে উচ্চারিত সেই বাণী কবির চিত্তে এক গভীর সুর বাজিয়ে তুলেছিল। কন্যার উক্তিটি তাঁর কাছে বিশ্বের অন্তর্নিহিত বেদনারই প্রকাশ বলে মনে হয়েছিল।

চলমানতাই বিশ্বের ধর্ম; এখানে কিছুই স্থির হয়ে থাকে না। এই পৃথিবীতে যা কিছু জন্মায় ও জীবিত থাকে, তা অনিবার্যভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। এ প্রবাহ অপ্রতিরোধ্য। যেমন এই গতিশীলতা বিশ্বজীবনের সত্য, তেমনি স্থিতির আকাঙ্ক্ষাও সত্য। এই প্রবহমান জীবনস্রোতের মধ্যে ভালোবাসার, স্নেহের, প্রেমের বন্ধন রচিত হয়। মানুষ প্রিয়জনকে আলিঙ্গনে বেঁধে চিরকাল ধরে রাখতে চায়। শুধু মানবজীবনে নয়, কবি সমগ্র বিশ্বপ্রকৃতিতেই এই প্রেমের অভিব্যক্তি লক্ষ্য করেছেন। মৃত্তিকাও বুকের তৃণতরুলতাগুলো ধরে রাখতে চায় চিরকালের মতো। ভালোবাসার বন্ধন গড়ার এই আকাঙ্ক্ষা পৃথিবীতে প্রতিমুহূর্তে প্রতিহত হচ্ছে, আর এই ভীরু বাসনা করুণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। জীবনপ্রবাহ অবিরাম চলেছে প্রলয়সমুদ্রের দিকে; তার থামার, বা পিছনে ফিরে তাকাবার সময় নেই। কবি অনুভব করেন, এ বিশ্বে প্রতিমুহূর্তে এই গতি ও স্থিতির আকাঙ্ক্ষার দ্বন্দ্ব থেকে আর্ত বেদনা জাগছে। পৃথিবী পূর্ণ হয়েছে সেই বেদনার ক্রন্দনে। সকলেই ব্যাকুল হয়ে বাহু প্রসারিত করে বলেছে, ‘দিব না দিব না যেতে’, কিন্তু বিশ্ব-নিয়মে তারা সকলেই ছুটে চলেছে, কেউ স্থির নেই।

কবির দৃষ্টিতে, এই জগতে প্রতিমুহূর্তে স্থিতি ও গতির দ্বন্দ্ব চলছে। এই দ্বন্দ্বে যে বেদনা জাগে, তা পুরো বিশ্বকে আবিষ্ট করে রেখেছে। কবির হৃদয়েও সেই বেদনার অনুভূতি প্রবাহিত হয়েছে। তিনি অনুভব করেছেন, ধূলিকণা থেকে মানুষের জীবন পর্যন্ত ভালোবাসার বন্ধন রচিত হয়েছে। এই বন্ধনকে অক্ষয় করার আকাঙ্ক্ষা সর্বত্র বিরাজ করছে। কিন্তু কোন বন্ধনই চিরন্তন নয়। আকাঙ্ক্ষার ব্যর্থতার বেদনা কবির চিত্তকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী মহিলা কবি হিসেবে পরিচিত। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য, মানবিক অনুভূতি, প্রেম, বিরহ, এবং সমাজের বিভিন্ন দিকগুলো

Read More

মুহম্মদ আবদুল হাই এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মুহম্মদ আবদুল হাই (২৬ নভেম্বর ১৯১৯ – ৩ জুন ১৯৬৯) বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান ধ্বনিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যিক। তার গবেষণা এবং কর্ম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ

Read More

ন্যায় দর্শনের বিষয়বস্তু: ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? ন্যায় দর্শন কী বা কাকে বলে? ন্যায় দর্শনের কয়টি শাখা ও কি কি?

ন্যায়দর্শন হচ্ছে ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম একটি দর্শন। ন্যায়দর্শন হল সেই ভিত্তি যার উপর ভারতের উচ্চতর দর্শনগুলি নির্মিত হয়েছে। ন্যায় দর্শনের প্রবক্তা বা প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি

Read More

বিদ্রোহী কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়

‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৮ সালের কার্তিকে, ২য় বর্ষের ৩য় সংখ্যক ‘মােসলেম ভারত’ পত্রিকায়। কবিতাটি রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের দুর্গাপূজার কাছাকাছি সময়ে। নজরুলের বিদ্রোহী

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.