Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

সোনার তরী কবিতাটি বর্ষার চিত্র-রূপময় কবিতা- আলোচনা করো

কবির অনুভূতি প্রকাশের জন্য যে ভাষাচিত্র রচিত হয়, তার সৌন্দর্য পাঠককে প্রাথমিকভাবে মুগ্ধ করে। কবি যে বিষয়গুলি বলতে চান, সেগুলি তিনি ভাষার শিল্পরূপে অত্যন্ত নিপুণতার সাথে প্রকাশ করেন। কবিতার আপাত সৌন্দর্য যদি কোন পাঠককে আকৃষ্ট করে, কিন্তু অপর কোন তাৎপর্য তার কাছে প্রতিভাত না হয়, তাহলে বলা যায় যে, তিনি কবিতার রূপকে সঠিকভাবে উপভোগ করতে সক্ষম হননি। আসলে সার্থক সাহিত্য সৃষ্টি সকল শ্রেণীর পাঠককে তৃপ্ত করে। ‘সোনার তরী’ কবিতাটি সম্পর্কেও এই ধারণা সত্য। যদি কেউ এই কবিতাকে কোন তত্ত্বের রূপক হিসেবে না দেখে বরং আপাত অর্থে গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই এর রস আস্বাদন করতে সক্ষম হবেন।

‘সোনার তরী’ কবিতার ছয়টি স্তবক একটি নিবিড় বর্ষাপ্রকৃতির পটভূমি এবং একজন নিঃসঙ্গ মানুষের বিচ্ছিন্নতার বেদনা গীতিরসে প্রকাশ পেয়েছে। জমিদারি পর্যবেক্ষণের সূত্রে রবীন্দ্রনাথ এ সময়ে দীর্ঘকাল পদ্মাবিধৌত পল্লীবাংলার প্রকৃতির নিকট অবস্থিত ছিলেন। এই কারণে বর্ষাগ্লাবিত পদ্মার প্রত্যক্ষ রূপ কবি তখন তার চর্মচক্ষে দেখেছেন। এ প্রসঙ্গে কবি নিজেই লিখেছেন—“যে দিন বর্ষার অপরাহ্ণে খরস্রোতা পদ্মার উপর দিয়ে কাটা ধানে ডিঙি নৌকা বোঝাই করে মগ্নপ্রায় চর থেকে চাষীরা এপারে চলে আসছে…..সেই দিনেই ‘সোনার তরী’ কাব্যের সঞ্চার হয়েছিল মনে…..।” এ কবিতায়, সবকিছু ছাড়লেও বর্ষার চারুচিত্রটি ভোলা যায় না। নদীর তীরে বর্ষা নেমেছে, অপর পারে গ্রামখানি মেঘে ঢেকে অস্পষ্ট দেখাচ্ছে। কৃষক তার ধান কেটে আঁটি বেঁধে রেখেছে। তাকে অপরপারে যেতে হবে, বিলম্ব করা চলবে না। নাবিক এল, সোনার ধান তুলে নিয়ে গেল, কিন্তু চাষী তরীতে ঠাঁই পেল না। তার সোনার ধানে তরনী পূর্ণ হয়ে গেছে। শ্রাবণ মেঘ আচ্ছন্ন আকাশের নীচে কৃষক একাকী পড়ে রইল, কবে তার এই নির্বাসন শেষ হবে, কেউ জানে না।

এই সাধারণ শব্দচিত্রে কবি সঙ্গীতের মেলবন্ধন করলেন। প্রথম অংশেই মেঘের গর্জন এবং নদীর খরস্রোত কী সুন্দরভাবে শব্দসংগীতকে মূর্ত করে তুলেছে, “ভরা নদী ক্ষুরধার খরপরশা” যেন নদীর তীব্র স্রোতকে অনুরণিত করেছে। ‘তরুছায়া মসীমাখা’য় যে দূরত্ব ও অস্পষ্ট রহস্য, তা যে কোনো পাঠক অনুধাবন করতে পারেন। ‘ঢেউগুলি নিরুপায় ভাঙে দুধারে’—এই কথা যেন ভেঙে ভেঙে চলেছে। “আর আছে? আর নাই, দিয়াছি ভরে” ইত্যাদি অংশের সংলাপ কবিতাটিতে একটি নাটকীয় ভঙ্গি ফুটিয়ে তুলেছে। সর্বশেষ অংশে মেঘের নিষ্ফল আবর্তন যেন এক গতিশূন্য ভাষার রূপ পেয়েছে। শব্দচিত্র ও শব্দসঙ্গীতে যে গাম্ভীর্য ও সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়েছে, অর্ধপরিচিত নাবিকের আগমনে যে রহস্যময়তা ঘনীভূত হয়েছে এবং সর্বোপরি যে করুণরস পরিবেশন করা হয়েছে, তা যে কোনো পাঠকেরই উপভোগ্য। এই রস উপভোগের জন্য কবিতাটির কোনো তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না। কৃষকের অন্তহীন নিঃসঙ্গতা ও বিচ্ছিন্নতাবোধের করুণ রূপ যেন সজল বর্ষার চিত্ররূপগুলির সংমিশ্রণে মর্মস্পর্শী হয়ে ওঠে। এই স্বাদটুকুর জন্য কবিতাটি চিরদিনের জন্য পাঠকের মনে গেঁথে যায়।

কিন্তু যে কোনো মহৎ কবিতায় বিচ্ছিন্নভাবে রসাবেদন থাকলেও, তার সমগ্র সৃষ্টির পটভূমিতে কোন বিশেষ কবিতাকে বিচার করলে কবির ভাবজীবনের ব্যাপকতার সহানুভূতির আভাস পাওয়া যায়। কবিকে বুঝতে হলে এই দৃষ্টিতে রচনার বিচার বাঞ্ছনীয়। ‘সোনার তরী’ কবিতাটিকে কোনো তত্ত্বের রূপক হিসেবে না দেখে আপাত অর্থে গ্রহণ করলেও এর রসাস্বাদন সম্ভব; কিন্তু রবীন্দ্রমানসের বিবর্তনধারার পরিপ্রেক্ষিতে এই কবিতার তাৎপর্য উপলব্ধি করার চেষ্টা করলে কবিতাটির আবেদন যে ব্যাপকতর ও গভীরতর হয়, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

প্রমথ চৌধুরী এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

প্রমথ চৌধুরী (৭ আগস্ট ১৮৬৮ — ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬) বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি প্রাবন্ধিক, কবি ও ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিত। তার পৈতৃক নিবাস বর্তমান

Read More
সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

অস্তিত্ববাদ অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা

Read More
নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

“বিধির লিখন যায় না খনন” – বিধি অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা যার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তা কখনো খন্ডন করা যায় না সর্ব প্রকার চেষ্টা বা সাধনার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.