Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

মর্মান্তিক ব্যঙ্গ, কঠিন তিরস্কার এবং শেষ পর্যন্ত অন্তর্ভেদী আর্তনাদ জনার পত্রিকাটিকে আগাগোড়া উচ্চম্বরে বেঁধেছে- আলোচনা করো

করুণ, বীর ও রৌদ্র রসের সমাহার জনার পত্রিকাটি বীরাঙ্গনা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পত্রিকাগুলির মধ্যে উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত হতে পারে। করুণ ও বীর রসের সাথে রৌদ্ররসের সার্থক মিশ্রণে কবি জনা চরিত্রটি এমন দীপ্যমান করে গড়েছেন যে তাকে দ্বিতীয় প্রমীলা বলা যেতে পারে। প্রমীলা ও জনা উভয়েই সার্থক বীর নারী হলেও, দুজনের মূল পার্থক্য হল প্রমীলা প্রেমিকা কুলবধূ; কিন্তু জনার প্রকৃত পরিচয় হল জননী রূপে। অন্যায় সমরে অর্জুন বধ করেছেন তার পুত্র প্রবীরকে, তাই তিনি ক্ষত্রিয় রমণী হিসেবে ক্ষত্রিয় ধর্মকে মান্য ও শ্রদ্ধা করে অর্জুনকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছুক। কিন্তু হায়! বিধিবাম। তার প্রতি নীলধ্বজ ক্ষত্রিয় ধর্মকে পরিহার করে তথা অবমাননা করে শত্রুকে মিত্রভাবে গ্রহণ করেছেন। যে হাত ছিল প্রবীরের রাজ রক্তিম, সেই হাত পরম প্রীতিতে গ্রহণ করেছেন নীলধ্বজ। নীলধ্বজের পুত্রহস্তা শত্রু অর্জুন আজ তার মিত্রসম। অস্ত্রের ঝনঝনাগারে রণসাজে যেখানে শত্রুর সম্মুখীন হওয়া কর্তব্য, তা বিস্মৃত হয়ে তিনি মধুর ভাষায় অর্জুনের স্তুতি করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, অর্জুনকে নর-নারায়ণ জ্ঞানে পূজা করে তিনি ক্ষাত্রধর্মের অবমাননা করেছেন। শেষে কি ব্রাহ্মণ ললাটে ঠাঁই পাবে চণ্ডালের পদধূলি? আজ কোথায় অস্তমিত হল নীলধ্বজের বীরদর্প? কোথায় গেল তার আত্মসম্মানবোধ? ক্ষত্রিয় কন্যা জনা যখন স্বামীর কাপুরুষতাকে ধিক্কার জানিয়ে লিখেছেন—

‘তব সিংহাসনে

বসিছে পুত্রহস্তা রিপু মিত্রতম এবে

সেবিছ যতনে তুমি অতিথি রতনে!’

অথবা—

‘কেমনে তুমি, হায়, মিত্রভাবে

পরশ সে কর যাহা প্রবীরের লৌহ

লোহিত? ক্ষত্রিয় ধর্ম এই কি নৃমণি।’

তখন মনে হয় পুত্র শোকাতুরা নারী হৃদয়ের তেজ প্রতিটি পঙ্ক্তিতে অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো বিচ্ছুরিত হয়েছে।

জনা মধুসূদনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ট্র্যাজিক চরিত্র। তিনি নিজে অন্তরে বাহিরে সার্থক ক্ষত্রিয় রমণী। তিনি স্বহস্তে তার পুত্রকে যুদ্ধ সাজে সজ্জিত করে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছিলেন অথচ অর্জুনের হাতে অন্যায়ভাবে মৃত্যু ঘটেছে তার প্রাণপ্রিয় পুত্রের। পুত্রশোকের সেই নিদারুণ শোকাঘাত তো ছিলই, তাতে ইন্ধন যোগাল তার স্বামীর কাপুরুষোচিত আচরণ। চরিত্রটি ট্র্যাজিক হওয়ার এই কারণ। যে মুহূর্তে জনাকে স্বামীর বিরুদ্ধে অগ্নিশিখার মতো জ্বলে উঠে প্রতিবাদ করতে হবে, তখনই অন্তর থেকে আসছে তার নারীধর্মের অনুশাসন—‘পড়িব বিষম পালে গঞ্জিনে তোমাতে।’ কারণ তার স্বামী ‘গুরুজন’। এই দ্বন্দ্বের ওপরেই জনার ট্র্যাজেডি গড়েছে। আরও গভীরভাবে বললে বলা যেতে পারে জনার অন্তরের আসল কথাটি হল আত্মমর্যাদাবোধ। এই বোধকে আশ্রয় করেই তার অন্যান্য চারিত্রিক গুণগুলি বিকশিত হয়ে উঠেছে। একমাত্র পুত্র ক্ষত্রিয়ের মর্যাদার স্বার্থে অসমযুদ্ধে রণক্ষেত্রে প্রাণ দিয়েছে বলেই জনার কাছে তা এতই আদরণীয়, গভীর শোকের সাথে আত্মসম্মানের মহৎ আদর্শ মিলিত হয়ে জনা চরিত্রে এই ট্র্যাজিক মহত্ব আরোপ করেছে।

পুত্রশোকে যে হৃদয় বিহ্বল হয় না, স্বামীর আচরণ তথা উপেক্ষা তা একেবারে ভেঙে পড়েছে। পুত্রহীন জনার একমাত্র অবলম্বন ছিলেন নীলধ্বজ। তিনিও যখন তাকে প্রত্যাখান করলেন, তখন ঐহিক জীবনে জনার আর কোনো আসক্তি রইল না। তখন জনা উচ্চারণ করেছিলেন—‘ছাড়িব এ পোড়া প্রাণ জাহ্নবীর জলে?’ পরিণত বয়সের নারীর বেঁচে থাকার যে দুটি প্রধান অবলম্বন জননী ও পত্নীরূপে, তা দুটিই ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। পুত্র অন্যায়ভাবে নিহত, স্বামী জীবিত থেকেও পর পদলেহনকারী আত্মগৌরব হানির গভীর দুঃখ এই পত্রে করুণ্যের গভীর বেদনা বিস্তীর্ণ করে দিয়েছে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

মোহিতলাল মজুমদার এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মোহিতলাল মজুমদার (জন্ম: ২৬ অক্টোবর, ১৮৮৮ – মৃত্যু: ২৬ জুলাই, ১৯৫২) বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি, সাহিত্য সমালোচক এবং প্রবন্ধকার। তিনি তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টি,

Read More

রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্মঃ ২১ ডিসেম্বর, ১৮২৭— মৃত্যুঃ ১৩ মে, ১৮৮৭) বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং

Read More

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে কোন পত্রিকার মাধ্যমে? বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রবক্তা কে? বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের স্লোগান কী ছিল?

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারবিরোধী একটি প্রগতিশীল আন্দোলন। ১৯২৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হুসেনের নেতৃত্বে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামে

Read More

কোন চিত্রশিল্পী পটুয়া নামে খ্যাত? চিত্রশিল্পী পটুয়া কামরুল হাসান

চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান ‘পটুয়া’ নামে খ্যাত। কামরুল হাসান (২ ডিসেম্বর ১৯২১ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮) প্রখ্যাত বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী। তিনি ড্রইং-এ দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বব্যাপী সুনাম

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.