Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

সোমের প্রতি তারা পত্রিকাটির ভাববস্তু বিশ্লেষণ করো

পত্রিকাটির সূচনাতেই দেখা যায়, সম্বোধন নিয়ে লেখিকার সংকোচের কারণ হল, প্রণয় বিষয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের বিরোধিতা। দেবগুরু বৃহস্পতির স্ত্রী হয়ে তারা প্রণয় ভিক্ষা করছেন বৃহস্পতির শিষ্য সোমের কাছে। সমাজ ও ধর্মের দৃষ্টিতে উভয়ের প্রেম অবৈধ ও নিন্দিত। কিন্তু হৃদয়াবেগ ও কাম প্রবৃত্তি এতই প্রবল যে গুরুপত্নী নিজেকে সংযত রাখতে পারছেন না। অপরাধ জেনেও তিনি কামনার প্রবল ভাবোচ্ছ্বাসে ভেসে চলেছেন। চিঠির ভাষাতেও এই অসংযত কামনার গাঢ় রং ফুটে উঠেছে।

‘সুধাংশু সিধি, আমি গুরুপত্নী! তুমি পুরুষরত্ন! কী কপাল, সম্পর্কের কথা ভুলে গিয়ে ইচ্ছে করছে তোমার পদসেবা করতে। খুবই লজ্জার কথা! পাপের কথা। জাতের এই পোড়া লেখনী একথা লিখছে কেমন করে তা ভাবলে শিহরিত হতে হয়। কিন্তু দোষটা কলমের ঘাড়ে চাপিয়ে কী লাভ! বৃথা তাকে গঞ্জনা দেওয়া। মনের কথা লেখে কলম। মন পুড়লে কলমের কী দোষ! সেও পুড়বেই। গাছের মাথায় বাজ পড়লে কেবল গাছ পোড়ে না, দগ্ধ হয়ে যায় তার পদাশ্রিত লতাও। এইভাবেই চন্দ্রের প্রতি তাঁর খেদোক্তি প্রকাশ করতে থাকে।

কুকর্মে লিপ্ত দুর্বৃত্ত যেমন প্রথমেই নিভিয়ে দিতে চায় আলো, তেমনি স্মৃতিকে আঁধারে ঢেকে দিতে চায় ‘পাপিনী’ তারা। অতীত ভবিষ্যৎ সবই ধীরে ধীরে বিস্তৃত হতে চায়। ভুলে যেতে চায়, কে সে? কুল, মান, ধর্ম, লজ্জা, ভয়, সকল আজ তার কাছে তুচ্ছ, ফুলের খাঁচা ভেঙে কুল বিহঙ্গিনী বায়ুপথে উড়ে চলেছে। তারা অনুরোধ করেছে, ‘তারানাথ’ সোম এসে তাকে গ্রহণ করুন। ‘ধর আসি তারে তারানাথ’। পদ্ম ফুলের বুকের গভীরে যেমন লুকিয়ে থাকে ‘সৌরভ’, তেমনি তারার হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে ছিল সোমের জন্য ভালোবাসা। জ্বলন্ত আগুনকে যেমন গোপন করা যায় না, তেমনি ওই ভালোবাসাকে গোপন রাখা গেল না। নীলধ্বজ কন্দপ যেভাবে তার ‘পঞ্চঘর শর’ হেনে অসহায় পুরীকে জিতেছে, সেইভাবে তারাকে জিতে নিয়েছে পুষ্পধনু।

এখন সোম ছাড়া কে তাকে বাঁচাবে? তাই, ‘সোমের প্রতি তারা’ পত্রিকাটিকে রোমান্টিক প্রেমের আলেখ্য হিসাবে বিচার করলে দেখা যায়–সংকোচ ও লজ্জার মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়ে এটি সত্যিই একটি সুন্দর কবিতা হয়ে উঠেছে, ‘Dramatic Monologue’-এর অবসর নেওয়ায় এর ভেতর দিয়ে আশ্চর্য এক নারী কণ্ঠ শোনা যায়। এ নারী দ্বিধা ও সংশয়ে জর্জরিত হলেও, এ নারীর মধ্যে ভালোবাসার উদ্বেল উষ্মতার অনুভব করা যায়। এ পত্রিকার ‘তারা’ যেন রক্তমাংসের একটি জীবন্ত চরিত্র। সমাজের বাঁধন কেটে সে তার প্রেমকে অবলম্বন করেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছে। সাহিত্য যদি জীবনের সমালোচনা হয়, এই পত্রিকাটিতে তার সুস্পষ্ট পরিচয় রয়েছে। জীবনের কথা এমন নির্মমভাবে আমাদের সাহিত্যে খুব কমই বলা হয়েছে। শত ধিক্কার সহ্য করেও তারা ভারত প্রেমকে ত্যাগ করতে পারেনি। এছাড়া শব্দের যথাযথ ব্যবহার, উপমা অলঙ্কারের প্রয়োগ এবং নাটকীয় ভঙ্গি এই পত্রিকাটিকে ‘বীরঙ্গনা’ কাব্যের শ্রেষ্ঠ একটি পত্রিকায় পরিণত করেছে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী মহিলা কবি হিসেবে পরিচিত। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য, মানবিক অনুভূতি, প্রেম, বিরহ, এবং সমাজের বিভিন্ন দিকগুলো

Read More

মুহম্মদ আবদুল হাই এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মুহম্মদ আবদুল হাই (২৬ নভেম্বর ১৯১৯ – ৩ জুন ১৯৬৯) বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান ধ্বনিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যিক। তার গবেষণা এবং কর্ম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ

Read More

ন্যায় দর্শনের বিষয়বস্তু: ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? ন্যায় দর্শন কী বা কাকে বলে? ন্যায় দর্শনের কয়টি শাখা ও কি কি?

ন্যায়দর্শন হচ্ছে ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম একটি দর্শন। ন্যায়দর্শন হল সেই ভিত্তি যার উপর ভারতের উচ্চতর দর্শনগুলি নির্মিত হয়েছে। ন্যায় দর্শনের প্রবক্তা বা প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি

Read More

বিদ্রোহী কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়

‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৮ সালের কার্তিকে, ২য় বর্ষের ৩য় সংখ্যক ‘মােসলেম ভারত’ পত্রিকায়। কবিতাটি রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের দুর্গাপূজার কাছাকাছি সময়ে। নজরুলের বিদ্রোহী

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.