বীরাঙ্গনা কাব্যকে ঊনবিংশ শতাব্দীর নারী মুক্তির কাব্য বলা হয় কারণ এটি নারীর স্বাধীনতা, আত্মমর্যাদা, এবং পুত্রস্বার্থের চেয়ে অধিক গুরুত্ব দানের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। মাইকেল মধুসূদন দত্তের এই কাব্য নারীদের কণ্ঠে তাদের ভাবনা, আকাঙ্ক্ষা এবং অভিমান তুলে ধরেছে যা ঐতিহাসিকভাবে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানদণ্ডের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ।
১. নারীর কণ্ঠস্বাধীনতা: বীরাঙ্গনা কাব্যে নারীরা তাদের মতামত প্রকাশে সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রাচীন পুরাণে নারীর কণ্ঠস্বর প্রায়ই উপেক্ষিত বা অবহেলিত হলেও, মধুসূদন তাঁদের পত্রের মাধ্যমে তাঁদের ভাবনা ও অভিমান ব্যক্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। এই কাব্য নারীদের কণ্ঠস্বাধীনতা ও অভিব্যক্তির স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
২. নারীর অভিমান ও প্রতিবাদ: কাব্যের বিভিন্ন পত্রে নারীরা তাঁদের বিরহ, ক্ষোভ এবং অভিমান প্রকাশ করেছেন, যা তাঁদের আত্মমর্যাদা ও সামাজিক অবস্থানের প্রতিফলন। যেমন, দ্রৌপদী ও কেকয়ী পত্রে তাঁদের স্বামীদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের দুঃখ ও অভিমান প্রকাশ করেছেন। এই ধরনের প্রকাশনার মাধ্যমে নারীদের প্রতিবাদ ও আত্মমর্যাদা সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
৩. প্রেম ও সম্পর্কের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি: বীরাঙ্গনা কাব্যে প্রেম ও সম্পর্কের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে নারীদের প্রেম ও বিরহের বর্ণনা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অনুভূতির বিবরণ নয়, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্তরের প্রেক্ষাপটেও প্রতিফলিত হয়েছে। নারীর অনুভূতি ও অভিযোগ সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।
৪. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ঊনবিংশ শতাব্দীতে নারীর অধিকারের বিষয়টি সমাজে বেশ উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে। এই কাব্য ঐ সময়ের সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিফলন হিসেবে বিবেচিত। নারীদের বোধগম্যতা ও আত্মমর্যাদার বোধ তুলে ধরে এটি সেই সময়ের নারীদের মুক্তির সংকল্প ও সাহসিকতার প্রতীক।
বীরাঙ্গনা কাব্য নারীদের সত্ত্বার সম্মান এবং সামাজিক পরিবর্তনের চিত্র উপস্থাপন করেছে, যা ঊনবিংশ শতাব্দীর নারীর মুক্তির একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।