Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

টিনের তলোয়ার নাটকে বসুন্ধরা চরিত্রের স্বরূপ বিশ্লেষণ করো

টিনের তলোয়ার নাটকের বসুন্ধরা চরিত্রটি সবকিছু মেনে নেওয়া ধরিত্রীর মতো। অন্যভাবে বললে, সমাজে এমন কিছু নারী থাকেন যারা শুধু নিজের জন্য নয়, গোটা সংসারের দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। নিজের সুখ-দুঃখের কথা না ভেবে, অন্যের অপমান সহ্য করে সমস্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রায়ই অন্যের কাজও হাসিমুখে করে দেন। অন্যের আঘাতকে নিজের বুকে নেন এবং নিজের যন্ত্রণার কথা কখনোই প্রকাশ করেন না। এ নাটকে বসুন্ধরা এমনই একজন নারী চরিত্র।

গ্রেট বেঙ্গল অপেরার দায়িত্বশীল অভিনেত্রী বসুন্ধরা। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে এই নাট্যসংসারের প্রধান কর্ত্রী তিনি। তাঁদের খাওয়া-দাওয়া, রান্না-বান্না, হেঁসেলের সব দায়িত্ব বসুন্ধরার। বাজার করা, সকালের জলখাবারের মেনু ঠিক করা, এসবও তাঁরই কাজ। একইসঙ্গে থিয়েটারের সকল খুঁটিনাটি বিষয়েও নজর রাখতে হয় তাঁকে। মহড়া তদারকি করা, যদুগোপালকে জিরে-রসুনের কাথ খাওয়ানো, কার ঘুমের ওষুধ দরকার তা ঠিক করা সবকিছুই তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এমনকি পাওনাদার যখন দেনা শোধ না করার কারণে গালিগালাজ করে, তখনও তিনি সেই সমস্যা সামলান। মুদিকে বুঝিয়ে, তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নাটকের জন্য ব্যবহৃত জিনিস দিয়ে দলকে রক্ষা করেন।

গ্রেট বেঙ্গল অপেরায় ময়না আসার পর থেকে বসুন্ধরা তাকে মায়ের মতো আগলে রেখেছেন। তিনি ময়নাকে বলেছেন, কিশোরী বয়সে এক রাজা তাঁকে অপহরণ করেন এবং যখন তাঁর ইচ্ছা পূরণ হয়ে যায়, তখন তাঁকে ফেলে চলে যান। সেই সময় দেহ ব্যবসায় নামা ছাড়া তাঁর আর কোনো উপায় ছিল না। পরে তিনি গ্রেট ন্যাশানাল থিয়েটারে অভিনেত্রী হিসেবে যোগ দেন এবং অর্ধেন্দু শেখর মুস্তাফীর কাছে নাট্য শিক্ষা নেন। এরপর বেণীমাধব তাঁকে গ্রেট ন্যাশানাল থেকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে আসেন। অভিনেত্রী গোলাপ সুন্দরী তাঁর আদর্শ ছিলেন, যাঁর সংসার, স্বামী, সন্তান সব ছিল। কিন্তু বসুন্ধরার ভাগ্যে এসব জোটেনি, তাই ময়নাকে পেয়ে মাতৃস্নেহে তাকে পূর্ণভাবে আগলে রাখেন।

ময়নাকে অভিনয় শেখালেও, মঞ্চের শিষ্টাচার, প্রথা, দর্শকের উল্লাসে ময়নার ভয় কাটিয়ে সাহস দেওয়া সবই করেছেন বসুন্ধরা। তিনি সত্যিকারের মায়ের মতো ময়নাকে বড়ো অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তুলতে চান এবং ময়নার সাফল্যে খুশি হন। অনেক অভিনেত্রীর মতো ঈর্ষা না করে, তিনি ময়নার মধ্যে নিজের পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছেন। যখন বেণীমাধব ময়নাকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের রক্ষিতা করতে চায়, তখন তাঁর হৃদয় ভেঙে যায়। তিনি ময়নাকে দল ছেড়ে চলে যেতে বলেন, যেন সে পতিতার জীবনে না যায়। বসুন্ধরা নিজে থিয়েটারের মাধ্যমে পতিতার জীবন থেকে উঠে এসেছেন, তাই তিনি ময়নাকে বাঁচাতে চান। কিন্তু সফল হন না। তাঁর কান্না ভিতরে দমিয়ে রেখে তিনি আবারও অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন।

বসুন্ধরা থিয়েটার ছাড়া কিছু বোঝেন না। তিনিও বেণীমাধবের মতোই প্রিয়নাথের নাটকের গুরুত্ব বুঝতেন। তিনি তিতুমীরের নাটক, পলাশির যুদ্ধ নিয়ে নাটকে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। যখন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ প্রিয়নাথের নাটক বন্ধ করতে চান, তিনি প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, “আমরা কোন পালা গাইব, তা আর বাবুর হাতে নেই।” কিন্তু বেণীমাধব তিতুমীর নাটক বন্ধ করলে তিনি আঘাত পান। তিনি বেণীমাধবকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাঁর কাছ থেকে কোনো মদের প্রসাদ নেন না। তিনি বলেন, “তোমাকে আর পুজোও করব না কোনোদিন। খোরাকির জন্য তোমাকে সহ্য করব।” এটি সামাজিক অন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে এক নীরব প্রতিবাদ।

বসুন্ধরার মধ্যে সুপ্ত অথচ মহান দেশপ্রেম ছিল, যা নাটকের সপ্তম দৃশ্যে প্রকাশ পায়। সধবার একাদশীর নিমচাঁদের ভূমিকায় অভিনয়ের সময় বেণীমাধব তিতুমীরের সংলাপ আওড়াতে থাকেন, এবং বসুন্ধরা একমাত্র তাঁর রূপান্তরের স্বরূপ বুঝতে পারেন। তিনি মঞ্চে প্রবেশ করে জলদের টুপী আর কোট ছুঁড়ে ফেলেন, যা দর্শকের উল্লাসধ্বনিতে অভ্যর্থিত হয়। নাট্যকার উৎপল দত্ত বসুন্ধরার মতো অবহেলিত নারীর হাতে বিপ্লবের পতাকা তুলে দিয়েছেন, এবং নাটকের শেষ দৃশ্যে বসুন্ধরা মহীয়সী হয়ে উঠেছেন—যিনি টিনের তলোয়ারকে বিপ্লবের খোলা তলোয়ার বানানোর জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, যিনি ‘বনফুল’ ছদ্মনামে অধিক পরিচিত, বাংলা সাহিত্যের এক বহুমুখী প্রতিভা। ১৯ জুলাই ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণকারী এই লেখক, নাট্যকার, কবি, এবং চিকিৎসক একাধারে সমাজের

Read More

মদনমোহন তর্কালঙ্কার এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মদনমোহন তর্কালঙ্কার (জন্ম: ১৮১৭ – মৃত্যু: ৯ই মার্চ, ১৮৫৮) ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাঙালি পণ্ডিত, যিনি বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষা

Read More

নীলদর্পণ নাটকের সাহিত্যিক মূল্যের চেয়ে সামাজিক মূল্য বেশি- আলোচনা কর

ভূমিকা: বাংলা নাটকের কয়েকজন বিশিষ্ট নাট্যকারের মধ্যে দীনবন্ধু মিত্র অন্যতম, কারো কারো মতে বাংলা নাটকের প্রাথমিক যুগে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার। মাইকেল মধুসূদন দত্ত যেমন পৌরাণিক ও

Read More

অর্ধ-স্বরধ্বনি কী বা অর্ধ-স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণসহ বাংলা অর্ধ-স্বরধ্বনির বৈশিষ্ট্য লিখ?

অর্ধ-স্বরধ্বনির সংজ্ঞার্থ নিরূপণ করে ব্রিটিশ ধ্বনিবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল জোনস বলেছেন, “Semi – vowel : a voiced gliding sound in which the speech organs start by producing

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.