Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চের প্রতিষ্ঠা ও অভিনয় অনুষ্ঠান সম্পর্কে পরিচয় দাও

ইংরেজদের নাট্যশালা ও অভিনয় অনুষ্ঠান দেখে শিক্ষিত বাঙ্গালীদের মধ্যে ঐরূপ নাট্যশালা স্থাপন ও অভিনয় অনুষ্ঠানের যে আগ্রহ ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যায় প্রসন্নকুমার ঠাকুরের ‘হিন্দু থিয়েটার’ (১৮৩১) কে। দেশের ধনী ব্যক্তিরা এই কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে নাট্যশালা স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এগুলিকে সাধারণভাবে সখের নাট্যশালা বলা যায়। তবে হিন্দু থিয়েটারে ইংরেজি নাটকের অভিনয় হয়েছে, বাংলা নাটকের নয়। একইভাবে নবীনচন্দ্র বসুর স্থাপিত নাট্যশালার (১৮৩৩) ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। এখানে ভারতচন্দ্রের ‘বিদ্যাসুন্দর’ নাটকের কাহিনীর নাট্যরূপ অভিনীত হলেও এটি যথার্থ নাটক হিসেবে বিবেচিত হয়নি। ফলে, এই দু’জনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে নাট্যশালা স্থাপন হলেও বাংলা নাটকের অভিনয় না হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে তেমন কোন সাড়া সৃষ্টি হয়নি।

বাঙ্গালীর প্রতিষ্ঠিত নাট্যশালায় খাঁটি বাংলা নাটকের (শকুন্তলা’র অনুবাদ) অভিনয় শুরু হয়েছিল আশুতোষ দেবের বাড়িতে, তাঁর দৌহিত্র শরৎচন্দ্র ঘোষ কর্তৃক স্থাপিত নাট্যশালায় (১৮৫৭)। এই অভিনয় এবং একই সাথে রামজয় বসাকের বাড়িতে রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ নাটক (অভিনয় দুবার হয়েছিল) এবং গদাধর শেঠের বড়বাজারে অবস্থিত বাড়িতে ও চুঁচুড়ার নরোত্তম পালের বাড়িতে একই নাটকের অভিনয় এদেশীয় বাঙ্গালী সমাজে এক বিশাল উদ্দীপনা সঞ্চার করেছিল। এই উৎসাহ থেকেই বাংলায় নাটক রচনারও উৎসাহ দেখা যায়। ১৮৫২ সাল থেকে (তারাচরণ শিকদার) বাংলায় নাটক রচনা শুরু হয়। তাছাড়া ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ নাটকটি সমকালীন সমাজের সংস্কার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় (কূলীন প্রথার বিষময় ফল) অবলম্বনে রচিত হয়েছে। অর্থাৎ নাট্যশালা স্থাপন ও অভিনয় অনুষ্ঠানের সাথে সমকালীন সমাজ ও জনসাধারণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

এই ধারাকে আরও উৎসাহিত ও অগ্রগতি দান করেছিলেন সমকালীন অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ও সাহিত্যরসিক কালীপ্রসন্ন সিংহ মহাশয়, যিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিদ্যাৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চ’। সুসাহিত্য আলোচনা ও উৎসাহদান প্রভৃতির জন্য কালীপ্রসন্ন সিংহ ‘বিদ্যোৎসাহিনী সভা’ নামে একটি সংস্থা গঠন করেন, যা মাইকেল মধুসূদনকে ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র জন্য সম্বর্ধনা জানিয়েছিল। রঙ্গমঞ্চটি একই কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত। এটি ১৮৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে প্রথম নাট্যাভিনয় হয়েছিল পরবর্তী বছরে, অর্থাৎ ১৮৫৭ সালের ১১ই এপ্রিল। এই অভিনয়ে ভট্রনারায়ণ রচিত সংস্কৃত নাটক ‘বেণীসংহার’-এর রামনারায়ণ তর্করত্নের অনুবাদ প্রদর্শিত হয়েছিল।

‘সংবাদ প্রভাকরে’ (১৫ই এপ্রিল, ১৮৫৭) প্রকাশিত বিবরণে জানা যায় যে এই অভিনয় মহাসমারোহের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রচুর গণ্যমান্য ব্যক্তি দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই অভিনয় এদেশীয় শিক্ষিত সমাজে একটি জাগরণের সৃষ্টি করেছিল। নাটকে কালীপ্রসন্ন নিজেও অভিনয় করে যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছিলেন। তিনি ‘বেণীসংহার’ নাটকের ভানুমতীর ভূমিকায় প্রায় লক্ষাধিক টাকার পোশাক ও অলংকারে সজ্জিত হয়ে মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিলেন। অতিরিক্ত উৎসাহিত হয়ে কালীপ্রসন্ন সিংহ নিজেই কালিদাসের ‘বিক্রমোবশী’ নাটকের অনুবাদ করে অভিনয় করান (১৮৫৭ সালের ২৪ নভেম্বর)। তিনি নিজেও এই নাটকে পূর্বর্বর ভূমিকায় অভিনয় করেন।

‘সংবাদ প্রভাকরের (১৮৫৭ সালের ২৫শে নভেম্বর) বিবরণে জানা যায় যে এই অভিনয় অত্যন্ত ভালো হয়েছিল, বহু এদেশীয় দর্শক এবং কিছু সম্ভ্রান্ত ইংরেজও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপর কালীপ্রসন্ন সিংহ ‘সাবিত্রী সত্যবান’ নামে একটি মৌলিক নাটক রচনা করেন (১৮৫৮) এবং ঐ বছর ৫ই জুন নাটকটির ‘অভিনায়ক পাঠ’ অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠান আসলে অভিনয় নয়, বরং নাটক-পাঠ বলা যেতে পারে। এই ধরনের নাটক পাঠের অনুষ্ঠান সে সময় একেবারেই নতুন ছিল।

এ সম্পর্কে সমকালীন পত্রিকার বিবরণ উল্লেখযোগ্য: “এরূপ প্রথা বঙ্গবাসীদের মধ্যে প্রচলিত নয়, তবে ইংরেজি শেক্সপীয়র প্রভৃতি নাটক যেরূপ পঠিত হয়ে থাকে, এটি একইভাবে পঠিত হবে, অধিকন্তু এতে গীত সংযোজন করা যাবে এবং তা যন্ত্রের সহিত মিলিয়ে গান করা যাবে।”

বস্তুত, কালীপ্রসন্ন সিংহ প্রতিষ্ঠিত ‘বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চের’ গুরুত্ব স্বীকার্য, কারণ সমকালীন বাংলাদেশে নাটক রচনা ও নাটক অভিনয়ের ক্ষেত্রে এই রঙ্গমঞ্চ যথেষ্ট শক্তি ও গতি সঞ্চার করেছিল। তাঁর রচিত নাটকগুলি সম্পর্কে জনৈক নাট্য সমালোচকের মন্তব্য যথেষ্ট প্রণিধানযোগ্য। “যে নাটকের দ্বারা সহজে সাধারণ্যে লোকশিক্ষা বিস্তৃত করা যায়, যে নাটকের অভিনয় দ্বারা জাতিকে উন্নত করা যায়, সেই নাটকের দ্বারা বঙ্গভাষাকে পুষ্ট করবার জন্য কালীপ্রসন্ন যে চেষ্টা করেছিলেন, তা সাহিত্যের ইতিহাসে সুবর্ণ আক্ষরে লিখিত হওয়া উচিত।”

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

প্রমথ চৌধুরী এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

প্রমথ চৌধুরী (৭ আগস্ট ১৮৬৮ — ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬) বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি প্রাবন্ধিক, কবি ও ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিত। তার পৈতৃক নিবাস বর্তমান

Read More
সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ : অস্তিত্ববাদ কী? অস্তিত্ববাদের বৈশিষ্ট্য ও জ্যাঁ পল সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, হাইডেগারের অস্তিত্ববাদ, কিয়ের্কেগার্দ, জেসপার্স, মার্সেলের অস্তিত্ববাদ

অস্তিত্ববাদ অস্তিত্ববাদ একটি দর্শন। দার্শনিক চিন্তার শুরু থেকেই বাস্তববাদ, ভাববাদ, জড়বাদ, যান্ত্রিকবাদ প্রভৃতি দার্শনিক মতবাদগুলো মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কীয় বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে বস্তু, ঈশ্বর, তত্ত্ব বা

Read More
নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

নিজের আপন মাকে বিয়ে করল ইডিপাস; শয্যাসঙ্গী হয়ে জন্ম দিল চার সন্তানের

“বিধির লিখন যায় না খনন” – বিধি অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা যার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তা কখনো খন্ডন করা যায় না সর্ব প্রকার চেষ্টা বা সাধনার

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.