নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা ছোটগল্পের মেধাবী পুরুষ। তিনি চল্লিশের দশকের অন্যতম প্রধান গল্পকার। মন্বন্তর, দাঙ্গা, যুদ্ধ, গণবিক্ষোভ, রক্তাক্ত খন্ডিত স্বাধীনতা, দেশভাগ, উদ্বাস্তু স্রোত-চল্লিশের বিপর্যয়কারী এই সব ঘটনা স্বাভাবিক কারণে প্রাধান্য পেয়েছে এই দশকের গল্পকারদের গল্পে। সেদিনের বিপর্যস্ত বাঙালী জীবনের এইসব নির্মম প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় এই সময়ের লেখকদের গল্পে। বলা যায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ও তার ব্যতিক্রম তো ননই, বরং এ সময়ের বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫ ) সময়ের এক প্রতিনিধি স্থানীয় গল্পকার তিনি।
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ডিনার’ গল্পের আলোচনা:
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ভোগবতী’ (১৩৫২) গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ডিনার’ গল্পটি তেরশ পঞ্চাশের পটভূমিতে লেখা। এই গল্পে গল্পকার দেখিয়েছেন দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে জঠর জ্বালা নিবৃত্তির জন্য মানুষ নিজের মেয়েকে দেহ ব্যবসায় নামাতে পারে তারই কাহিনী। গল্পের কেন্দ্রে আছে চম্পা নামক মেয়েটি। কথকের জবানিতে চম্পা সম্পর্কে ভাষ্য – ছেঁড়া কাপড়ে লজ্জা নিবারণ করতে হত, ভাত না থাকলে ফ্যান খেয়ে মাঝে মাঝে পেট ভরাতে হত, রাতের পর রাত জেগে অসুস্থ পীড়িত বাপের পরিচর্যা করতে হত এবং ব্যাধি-জর্জর বিরক্ত বিতৃষ্ণ বাপের বীভৎসতম গালাগালিগুলো নীরব চোখের জলে তাকে সহ্য করে যেতে হত।”
এমনই মেয়ে চম্পা। পক্ষাঘাতগ্রস্থ রঘুপতির কন্যা। রঘুপতির ভাই রমাপতি দরিদ্র বাঙালী ঘরের এই মেয়েকে দেহ ব্যবসায় নামিয়ে আত্মহত্যা করাতে বাধ্য করে। গল্পের শেষ দিকেও মিলিটারীর বাহুবন্ধনে দেখা যায় তেমনি হয়তো এক অসহায় বাঙালী নারী। কথক রঞ্জন, পটল আর হরেনসহ রমাপতির ডিনার শেষে ফেরার পথে সে দৃশ্য তাদের মনোজগতে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। বাহুবেষ্টিত নারীকে মনে হয় চম্পা।