Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

বাংলা গানের ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা কর

বাংলা গানের সূচনা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পাঠ করে আমরা জেনেছি যে বাংলা ভাষার প্রথম সাহিত্য হল চর্যাপদ

>> এই চর্যাপদগুলিও আসলে গান;

>> চর্যাপদ হল বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সাধনসঙ্গীত;

>> চর্যাপদ রচিত হয় দশম থেকে দ্বাদশ শতকে

>> চর্যাপদে গানের সংখ্যা ৫১;

>> চর্যার সঙ্গীতের অঙ্গ ৬ টি ;

>> চর্যাগীতির বিভিন্ন রাগ রামক্রী, মল্লারী, কামোদ।

>> চর্যার বাদ্যযন্ত্র – পটহ, মাদল, ডমরু, বীণা, একতারা।

চর্যাপদের পর বাংলা গানের ইতিহাসে যে গ্রন্থটির নাম করা যায় সেটি হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন।

>> এটি বাংলা সাহিত্যের আদি মধ্যযুগের একমাত্র সাহিত্যিক নিদর্শন।

>> এটি একরকমের নাটগীতি।

>> কবির নাম বড়ু চণ্ডীদাস।

>> মোট গান বা পদের সংখ্যা ৪১৮টি;

>> মোট রাগ রাগিণী রয়েছে ৩২টি।

এরপর একে একে আসে অনুবাদ সাহিত্য, মঙ্গলকাব্য এবং বৈষ্ণব পদাবলি। অনুবাদ কাব্য যথা রামায়ণ, মহাভারত এবং ভাগবত গাওয়া হত পাঁচালির সুরে। আর মঙ্গলকাব্যগুলি গাওয়া হত কৈশিকি রাগে।

মধ্যযুগের বাংলা গানের ধারায় সবথেকে উল্লেখযোগ্য সংযোজন হল বৈষ্ণব পদাবলি। রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা নিয়ে পদাবলি রচিত হয়েছিল। বৈষ্ণব পদাবলি সম্পর্কে দু-চার কথা –

>> অনুপ্রেরনা – জয়দেবের লেখা ‘গীতগোবিন্দ;

>> বিশিষ্ট পদকর্তা চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, জ্ঞানদাস ইত্যাদি;

>> মুসলমান পদকর্তা শেখ ফয়জুল্লাহ সৈয়দ মুর্তাজা।

পদাবলি থেকে এল কীর্তন। কীর্তনের সাথে বাঙালি মাত্রই পরিচিত কারণ এখনো গ্রামেগঞ্জে কীর্তনের আসর বসে।

>> কীর্তনের অঙ্গ পাঁচটি কথা, দোঁহা, আখর, তুক, ছুট।

>> কীর্তনের রসসংখ্যা ৬৪ টি।

>> কীর্তন গাওয়ার আগে গাওয়া হয় গৌরচন্দ্রিকা।

>> কীর্তন সম্রাট বলা হত। নন্দকিশোর দাস’কে।

অষ্টাদশ শতকে এল আধ্যাত্মিক সঙ্গীতের আরেকটি ধারা শ্যামাসংগীত। এর প্রথম এবং প্রধান কবি রামপ্রসাদ সেন। এরপর আসে আখড়াই, হাফ আখড়াই গান, কবিগান, টপ্পা, খেয়াল ও টপখেয়াল, ধ্রুপদ, ঢপকীর্তন এবং ঠুংরি। বাংলা টপ্পা গানের জনক নিধুবাবু বা রামনিধি গুপ্ত। বাংলায় ধ্রুপদ চর্চা শুরু করেন রামশঙ্কর ভট্টাচার্য। বাংলাদেশে দেশপ্রেমভাবনা প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় স্বদেশসঙ্গীত। প্রথম স্বদেশসঙ্গীত হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভারত সঙ্গীত’ কবিতা।

উনিশ শতকের শেষ প্রান্তে বাংলা গানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগল। শুরু হল বাংলা গানের নতুন অধ্যায়। এই সময়ের কয়েকজন কাণ্ডারি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, অতুলপ্রসাদ, কাজি নজরুল ইসলাম প্ৰমুখ।

এরপর বাংলা গানের ইতিহাস আলোচনায় যে নামগুলি উল্লেখযোগ্য সেগুলি হল সলিল চৌধুরী, ক্যালকাটা ইউথ কয়্যার, ভি বালসারা, ভুপেন হাজারিকা, জগন্ময় মিত্র, শচিনদেব বর্মন এবং আরও পরবর্তীকালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মান্ন দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, কিশোর কুমার, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা, নির্মলা মিশ্ৰ প্ৰমুখ

বাংলা সিনেমার গানঃ

বাংলা সিনেমায় প্রথম নেপথ্য/প্লে ব্যাক শুরু হয়েছিল ভাগ্যচক্র (১৯৩৫ সালে) ছবিতে। তারপর থেকে বাংলা সিনেমাতে গান অপরিহার্য হয়ে ওঠে। সত্যজিত রায়ের সিনেমাতেও গানের বিশেষ ভূমিকা ছিল। সত্যজিত রায়ের ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন।

>> রবিশঙ্কর – পথের পাঁচালি, অপরাজিত

>> বিলায়েত খাঁ জলসাঘর

>> সত্যজিত রায় – নিজের বাকি সব ছবি

শুধু সত্যজিত রায় নয়, খ্যাত অখ্যাত সকল বাংলা চিত্রপরিচালক তাদের ছবিতে গানের প্রয়োগ করেছেন। বাংলা সিনেমার গানের ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।

বাংলা ব্যান্ডের গানঃ

তরুন প্রজন্মের শ্রোতাদের কাছে ব্যান্ডের গান খুবই জনপ্রিয়। বর্তমানে ‘ভূমি’, ‘চন্দ্রবিন্দু’, ‘কালপুরুষ’ প্রভৃতি ব্যান্ডগুলি বাংলা তথা ভারতের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিচিতি অর্জন করেছে। ব্যান্ডের গানের ইতিহাসটি এইরকম-

  • বাংলা তথা ভারতের প্রথম প্রাদেশিক ভাষার ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলি
  • নেতা গৌতম চট্টোপাধ্যায়
  • প্রথম অ্যালবাম – সংবিগ্ন পাখিকুল ও কলকাতা বিষয়ক গান
  • দ্বিতীয় অ্যালবাম অ.উ. ব. বা অজানা উড়ন্ত বস্তু

বাংলা লোকসঙ্গীতঃ

বাংলা গানের প্রাণ লুকিয়ে আছে লোকসংগীতের সুরে। বাংলার লোকসঙ্গীতের প্রধান প্রধান ধারাগুলি হল-

*জারি জারি কথার অর্থ ‘ক্রন্দন’

*সারি মাঝিমল্লারা সারিবদ্ধভাবে যে গান গায়

* ভাটিয়ালি – মাঝিমল্লাদের একক গান

*ঝুমুর পুরুলিয়া সহ সমগ্র (ছোটনাগপুর)

* বাউল, ফকির, মুর্শিদি- পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে কোন পত্রিকার মাধ্যমে? বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রবক্তা কে? বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের স্লোগান কী ছিল?

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারবিরোধী একটি প্রগতিশীল আন্দোলন। ১৯২৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হুসেনের নেতৃত্বে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামে

Read More

কোন চিত্রশিল্পী পটুয়া নামে খ্যাত? চিত্রশিল্পী পটুয়া কামরুল হাসান

চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান ‘পটুয়া’ নামে খ্যাত। কামরুল হাসান (২ ডিসেম্বর ১৯২১ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮) প্রখ্যাত বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী। তিনি ড্রইং-এ দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বব্যাপী সুনাম

Read More

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী মহিলা কবি হিসেবে পরিচিত। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য, মানবিক অনুভূতি, প্রেম, বিরহ, এবং সমাজের বিভিন্ন দিকগুলো

Read More

মুহম্মদ আবদুল হাই এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মুহম্মদ আবদুল হাই (২৬ নভেম্বর ১৯১৯ – ৩ জুন ১৯৬৯) বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান ধ্বনিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যিক। তার গবেষণা এবং কর্ম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.