লােকের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, কাহিনী, গান, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদি হলাে লােকসাহিত্য হলাে। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক। কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে বাহিত হয়। মানব-সভ্যতার অগ্রগতিতে লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার হওয়ার পর এই শ্রেণীর লোকসংস্কৃতি অর্থাৎ যেগুলোকে আমরা লোকসাহিত্য বলি সেগুলোর বহু অংশ আজ লিখিত সাহিত্যে প্রবেশ করেছে। লােকসাহিত্য লােকসংস্কৃতির একটি জীবন্ত ধারা; এর মধ্য দিয়ে জাতির আত্মার স্পন্দন শােনা যায়। লােকসাহিত্যকে প্রধানত লােকসঙ্গীত, গীতিকা, লােককাহিনী, লােকনাট্য, ছড়া, মন্ত্র, ধাঁধা ও প্রবাদ এই আটটি শাখায় ভাগ করা যায়।
লোকসাহিত্যের প্রাচীন ধারণায় তা কেবল গ্রাম্যসাহিত্য বলেই পরিচিত ছিল। গ্রামীণ কৃষিজীবী মানুষের সাহিত্যই (যা মূলত মৌখিক) ছিল একসময় লোকসাহিত্য। কিন্তু এখন লোকসংস্কৃতির প্রেক্ষাপট পাল্টানোর সমান্তরালে লোকসাহিত্যের পরিধি বিস্তারিত হয়েছে। লোকসাহিত্য আর কেবল গ্রাম্যসাহিত্য নয়, নয় কেবলমাত্র কৃষিজীবীদের সাহিত্য। তা গ্রামের গণ্ডি ছেড়ে নাগরিক জীবনেও প্রবেশ করেছে। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একে ‘জনপদের হৃদয়-কলরব’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।