পৃথিবীকে প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দিয়েছে যে বই, সেই গ্রন্থ হলো কার্ল মার্ক্সের যুগান্তকারী বই ডাস ক্যাপিটাল। দেড়শো বছর আগে প্রকাশিত বইটির নাম ডাস ক্যাপিটাল। লেখক কার্ল মার্কস। সমাজবিজ্ঞানের গবেষণায় সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত বই হলো এই ডাস ক্যাপিটাল। অন্তর্জাল ঘাঁটলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মানুষ নাম শুনেছে কিন্তু পড়েনি, এমন বইয়ের তালিকা করলেও ওপরের দিকেই থাকবে ডাস ক্যাপিটাল।
ডাস কাপিটাল কার্ল মার্ক্সের লেখা পুঁজিবাদের সমালোচনামূলক একটি বই। উনিশ শতকের জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্ক্স ডাস ক্যাপিটাল লিখতে শুরু করেছিলেন ১৮৫৭ সালে। যে বছর বইটি লিখতে শুরু করেন তিনি, ওই বছরই মারা যায় তাঁর এক সন্তান। বইটি লিখতে তাঁর সময় লেগেছিল ১০ বছর। এই ১০ বছরই দারিদ্র্যের তীব্র কশাঘাতে জর্জরিত হয়েছেন তিনি।
মার্ক্সের জীবৎকালে কেবল ডাস ক্যাপিটাল-এর প্রথম খণ্ডই প্রকাশিত হয় ১৮৬৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর।
১৮৮৩ সালে মার্ক্সের মৃত্যুর পর তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় বাকি দুই খণ্ড, দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৮৫ সালে এবং তৃতীয় খণ্ড ১৮৯৪ সালে।
তবে তিন খণ্ডের ডাস ক্যাপিটাল-এর শেষ খণ্ডের অনেক অংশকে আক্ষরিক অর্থেই অসম্পূর্ণ কিংবা কোনো একটি ধারণার অপরিণত লেখ্য রূপ বলে মনে করেন অনেকে। সবকিছুর পরও পুঁজি, পুঁজির চরিত্র ও বিকাশসংক্রান্ত আলোচনায় দেড় শ বছর ধরে অবিরাম উচ্চারিত হয়ে আসছে বইটির নাম।
সমাজপ্রগতির সাথে অর্থনীতির জটিল সম্পর্ক মার্ক্সবাদের প্রধান অংশ। সামাজিক ইতিহাসের ব্যাখ্যায় মার্ক্স দেখিয়েছেন, যে কোনো ঐতিহাসিক যুগ সমকালীন পণ্য-উৎপাদন ব্যবস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উৎপাদন ব্যবস্থা বলতে মার্ক্স সাধারণভাবে উৎপাদন প্রসঙ্গ তোলেননি। মার্ক্স জোর দিয়েছেন উৎপাদন সর্ম্পকের উপর—যার অর্থ, উৎপাদন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে সামাজিক মানুষ পরস্পরের সঙ্গে যে সর্ম্পক গড়ে তোলে।
পুঁজি গ্রন্থে (১৮৬৭) মার্কস যে ধারণাগুলির উপর আলোচনা করেন সেই ধারণাগুলি সনাতন অর্থনীতিবিদদের সূত্রেই নেওয়া, যদিও তিনি এগুলি ব্যবহার করেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত করতে। বিনিময়, উৎপাদন, মূল্য, শ্রম, শ্রমের সামর্থ্য বা ক্ষমতা, শ্রমবিভাগ, বিযুক্তি, সম্পত্তি, মুনাফা প্রতিটি ধারণাকেই মার্কস উপস্থিত করেছেন এ বিষয়ে অর্থনীতির প্রবক্তাদের বা ব্যাখ্যাকারদের বক্তব্য দিয়ে এবং এরপর প্রতিটি বিষয়ের উপর নিজস্ব মতবাদ উপস্থিত করে প্রচলিত মতকে খণ্ডন করেছেন।
ডাস কাপিটালের প্রথম খন্ডে মার্ক্স পুঁজিবাদী সমাজে উৎপাদন প্রণালীর বিশ্লেষণ করেছেন। ধনতান্ত্রিক সমাজে বাজারে বিক্রয়ার্থ পণ্যদ্রব্যের দুটি চেহারা দেখতে পাওয়া যায়। একটিতে তার ব্যবহারিক মুল্য প্রকাশ পায়, অপরটিতে বিনিময় মুল্য।
ডাস কাপিটালের ২য় খন্ডের উপনাম পুঁজির সঞ্চালন প্রক্রিয়া। এখানে মার্ক্স ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে পুঁজির গতিবিধি, আবর্তন, নিয়োজিত পুঁজির পণ্যে রূপান্তর ও পরিশেষে বাজার-পদ্ধতির মধ্যে বিনিময় ব্যবস্থায় বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও মূল্যমানের মধ্যে ভারসাম্য-অবস্থায় সরল পুনরুৎপাদন পদ্ধতির প্রচলন, ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।
ডাস কাপিটালের ৩য় খন্ডটির উপনাম ধনতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার সামগ্রিক চিত্র। এখানে মার্ক্স বিশেষ বিশেষ মূল্যমানের প্রশ্ন, পুঁজির মুনাফার হার ও উদ্বৃত্ত মূল্যের বিভাজন থেকে প্রাপ্ত মুনাফার কথা বলেছেন। মার্ক্স দেখিয়েছেন, পণ্যোৎপাদনে পুঁজির মালিকের ব্যয়ের পরিমাণ ও পণ্যের যথার্থ উৎপাদন ব্যয় সমান নয়।
ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস মার্কসের “উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব” বিষয়ের নোটগুলো একত্রিত করেন এবং এগুলো পরে “পুঁজি”র চতুর্থ খণ্ড হিসেবে প্রকাশিত হয়।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জয়তী ঘোষ বলেছেন, দেড়শ বছরে বিরামহীনভাবে অসংখ্যবার এই বইয়ের মুদ্রণ হতে থাকা রীতিমতো বিস্ময়কর। ছোট হরফেও দুই হাজার পৃষ্ঠার তিন খণ্ডের বইটি এত দিন ধরে পড়া হয়ে আসছে। সাধারণ পাঠক না পড়লেও অর্থনীতির গবেষকদের জন্য এটি অবশ্যপাঠ্য।
জয়তী ঘোষের মতে, এই বই অনেকবার অপ্রাসঙ্গিক বা অদরকারি বিবেচিত হওয়ার পরও আলোচনায় ফিরে এসেছে। কেননা, পুঁজি ও পুঁজির চরিত্র বোঝার জন্য এই গ্রন্থের বিকল্প নেই। উপরন্তু এখানে (এবং কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতেও) এমন অনেক অংশ আছে, যার মধ্যে বৈশ্বিক পুঁজিবাদের উত্থান ছাড়াও সামন্ত প্রথার বিলোপসম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন মার্ক্স। সেই হিসেবে বলা যায়, মার্ক্সই প্রথম তাত্ত্বিক, যিনি বিশ্বায়নসম্পর্কিত ধারণা দিয়েছেন। ‘বিশ্ববাজার’ ধারণাটিও তাঁর উদ্ভাবিত।
বর্তমানে আলোচিত বিভিন্ন প্রকরণ বা প্রকরণের বীজ পাওয়া যাবে এই বইয়ে। যেমন ‘কমোডিটি ফেটিশিজম’ (পণ্যপূজা) বলতে যা বোঝায়, মানুষের সব কার্যক্রম ও লেনদেনকে মূল্যায়ন করা বা বিক্রয়যোগ্য করে তোলার মাধ্যমে যেভাবে কাজ করে পুঁজিবাদ, সেটিও দেখিয়েছেন মার্ক্স। আবার ‘এলিয়েনেশন’ বা বিচ্ছিন্নতার তত্ত্বের কথাও এখানে প্রথম বলেছেন মার্ক্স। কাজেই পুঁজির চরিত্রের বিভিন্ন দিক আলোকপাত করার সময় বেশ কয়েকটি দিক বাদ থেকে গেলেও এই মহাগ্রন্থই মূলত পুঁজিকে বুঝতে সাহায্য করে।
সাধারণ পাঠককে তিনি ডাস ক্যাপিটাল পড়তে উৎসাহ দেন না। কেননা, তাঁর বিচারে এর প্রথম বেশ কয়েকটি অধ্যায় বেশ নীরস ও বিরক্তিকর। বরং মার্ক্সকে পড়তে চাইলে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো পড়া ভালো বলে মত দিয়েছেন এই মার্ক্স বিশেষজ্ঞরা।
বিখ্যাত মনীষীদের কাজকর্ম নিয়ে প্রচলিত থাকে অনেক গল্প ও জনশ্রুতি। অনেক সময় দেখা যায়, সেসব গল্প ও জনশ্রুতির অনেক কিছুই ঠিক নয়, আদতে মিথ্যা। কিন্তু ডাস ক্যাপিটাল লেখার সময় কার্ল মার্ক্স যে গলা পর্যন্ত ঋণে ডুবে ছিলেন, এই তথ্যটি মিথ্যা নয়। এমনকি পাণ্ডুলিপি প্রকাশকের কাছে পাঠানোর জন্য ডাক খরচ দেওয়ার সামর্থ্য পর্যন্ত তখন ছিল না তাঁর। এঙ্গেলসকে লেখা চিঠিতে বারবার টাকা পাঠানোর জন্য তাগাদা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, পাওনাদারেরা সব কড়া নাড়ছে, টাকা না পাঠালে তাঁকে জেলে যেতে হতে পারে।
না, জেলে যেতে হয়নি মার্ক্সকে। মূলত ডাস ক্যাপিটাল-এর কারণে দেড় শ বছরের বেশি সময় ধরে দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিক হিসেবে মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান নিয়েছেন তিনি। ফলে কোনও অর্থনৈতিক নিয়মের অস্তিত্ব না থাকায় ডাস ক্যাপিটালের প্রথম খণ্ড (যা পুরোপুরি কার্ল মার্কসের নিজের সৃজন) ‘রাজনৈতিক অর্থনীতির একটি সমালোচনা’ শিরোনামে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন।
শাখা–প্রশাখা–উপশাখা সম্পৃক্ত ডাস ক্যাপিটাল সমাজ–সভ্যতা, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পুঁজি ও শ্রমের ভূমিকা সম্পর্কে এক চিরায়ত বিশ্লেষণ। প্রচলিত চিরায়ত সাহিত্যে মানব সমাজের বিভিন্ন ঘটনা, ঘাত–প্রতিঘাত, দ্বন্দ্ব সুললিত ভাষায় বিবৃত হলেও, তার কার্য–কারণ সম্পর্কে কোনও ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ সেখানে অনুপস্থিত। ডাস ক্যাপিটালের ঠিক সেটাই আছে এবং এই কারণেই তা অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। একেবারে অনন্য। প্রায় সাড়ে পাঁচশো পৃষ্ঠার কঠিন পরিক্রমার অবসান হলে অনুধাবন করা যায়, এক বিশাল কাঠামোর খসড়া রচনা করে কার্ল মার্কস ডাস ক্যাপিটাল লিখতে শুরু করেছিলেন। এবং সেই চিন্তার ব্যাপ্তিকে কুর্নিশ না জানিয়ে উপায় নেই। কার্ল মার্কসের মতবাদের অনুসারী অথবা প্রতিসারী সকলেই এ বিষয়ে একমত। ফলে, এখনও তা নিয়মিত পড়া হয়। এমনকী স্কুল–কলেজের পাঠ্যসূচিতেও নিয়ম করে পড়ানো হয়। অথচ প্রচার করা হয় যে, এটি হল তামাদি তত্ত্বের বাতিল বই।
আঠারোশো একচল্লিশে মাত্র তেইশ বছর বয়সে জার্মানির থুরিঙ্গিয়া প্রদেশে অবস্থিত জেনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করার পরে আঠারোশো তেতাল্লিশ নাগাদ প্যারিসে এসে মার্কস অর্থনীতি নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করেন। অর্থনীতির দর্শন–ইতিহাস–প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে যাবতীয় বইপত্র পড়তে পড়তে তাঁর মনে হল এমন একটা বই লেখা দরকার, যার সারমর্ম হবে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কঠোর সমালোচনা। উৎপাদন ব্যবস্থার মূলনীতি, বিনিয়োগকারী বা মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যেকার আপসহীন বৈপরীত্য, পুঁজিবাদের অস্থিতিশীল চরিত্র ইত্যাদি খোলাখুলি ভাবে তিনি বিশ্লেষণ করলেন।
প্রায় পঁচিশ বছরের ধারাবাহিক পড়াশোনা–গবেষণার ফলাফল ডাস ক্যাপিটালের প্রথম খণ্ড। এই একটি খণ্ডই মার্কসের নিজের লেখা। প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় পরের খণ্ডগুলির বিষয়সূচি উল্লেখিত। সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখে আঠারোশো তিরাশিতে মার্কসের মৃত্যুর পরে তাঁর কাগজপত্র, খসড়া লেখা ইত্যাদি সাজিয়ে ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস তৈরি করলেন ডাস ক্যাপিটালের দ্বিতীয় খণ্ড। প্রকাশকাল আঠারোশো পঁচাশি। মার্কসের বাদবাকি নথিপত্র ঘেঁটে ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস আরও পরে গড়ে তুললেন ডাস ক্যাপিটালের তৃতীয় খণ্ড। এই খণ্ডটি আঠারোশো চুরানব্বইয়ে প্রকাশিত হয়। আঠারোশো পঁচানব্বইয়ের পাঁচই আগস্ট জীবনাবসানের আগে এই খণ্ডটিই সম্ভবত ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের মার্কস চর্চার বিষয়ে শেষ অবদান।
হারিয়ে যাওয়া দেশ সোবিয়েত ইউনিয়নের সৌজন্যে বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইংরেজি অনুবাদের ডাস ক্যাপিটাল–সুলভ বহুল প্রচারিত সাদামাঠা প্রচ্ছদে মোড়ানো মোটা মোটা তিন খণ্ডের সমাহার মার্কসের ডাস ক্যাপিটালের এই সুলভ সংস্করণ পৃথিবীর বহু পাঠাগারে আজও বিরাজমান। অনেকের বসার ঘরের শোভা বর্ধনেও কাজে লাগত। এত সস্তায় রীতিমতো ইংরেজিতে ছাপা বই আর কোথায় পাওয়া যাবে!
বিজ্ঞান, প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত উন্নতির ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সামাজিক কাঠামো প্রভৃতি বিষয়ে অনেক পরিবর্তন এলেও, পুঁজি–মুনাফা, মালিক–শ্রমিক সম্পর্ক ইত্যাদির চরিত্র পাল্টিয়েছে কি? অনেকদিন ধরেই বড় শিল্পসংস্থাগুলির উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কমেছে। স্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ স্তিমিত। একশো বছরেরও আগে চালু হওয়া দিনে আট ঘণ্টার কাজের নিয়ম প্রায় অবলুপ্ত। স্থায়ী নিয়েগের বদলে চক্তিতেই নিযুক্ত হচ্ছে শ্রমিক–কর্মচারী। দিনে বারো–চোদ্দো ঘণ্টা কাজ করতে সকলেই যেন বাধ্য। এতেও শান্তি নেই। অবসরের সময়ে বাড়িতে বসে কাজ করে দিতে হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত এই বিশাল শ্রমজীবী বাহিনীর ধারাবাহিক কর্মদক্ষতায় এগিয়ে চলেছে এখনকার পণ্যভিত্তিক সমাজ–সভ্যতা। উৎপাদন ও পরিষেবা ব্যবস্থার সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে যুক্ত শ্রমজীবী গোষ্ঠীকে নিয়েই গড়ে উঠেছে এখনকার শ্রমিক শ্রেণী। কাজের চাহিদার তুলনায় যোগ্য কর্মীর সরবরাহ বেশি বলে কাজ হারানোর ভয়ে আট ঘণ্টার কাজের কথা মুখ ফুটে বলা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন না পেয়েও মুখ বুজে কাজ যেতে হয়। একদিকে অসংগঠিত অবস্থা, পাশাপাশি কাজ হারানোর আশঙ্কায় চতুর্দিকে আপাত শান্তি বিরাজ করছে।
ডাস ক্যাপিটাল প্রকাশের পরের দেড়শো বছরে দু দুটো বিশ্বযুদ্ধ হয়ে গেছে। বহু দেশে খরা–বন্যা, মহামারী–মন্বন্তরে মারা গেছে কয়েক কোটি মানুষ। দেশভাগ ও গৃহযুদ্ধের ফলে বাস্তুচ্যুত কয়েক কোটি মানুষ। অর্থনীতিতে কখনও এসেছে মহা মন্দা বা গ্রেট ডিপ্রেশন, কখনও আবার দক্ষিণ এশীয় ব্যাঘ্রের বিপর্যয়। মুক্ত অর্থনীতি বা বাজারের বিশ্বায়ন ঘটে যাওয়ার পরেও একবিংশ শতাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাব–প্রাইম লোনের দাপটে সারা দুনিয়া বেসামাল। এই সঙ্কট থেকে উদ্ধারের জন্যেই জন্ম নিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ইউনিডো, আইবিআরডি, ডব্লিউটিও, ইউএনডব্লিউটিও প্রভৃতি সংস্থা। রাষ্ট্রসঙ্ঘের ছত্রছায়ায় গঠিত এইরকম পনেরোটি সংস্থা প্রচলিত অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে সুরক্ষিত রাখার কাজে সদাব্যস্ত।
সমাজ বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় উদ্ভুত অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্তির উপায় অনুসন্ধানে কখনও জোট বেঁধে কখনও আবার করদাতাদের অর্থকে অনুদান হিসেবে ব্যবহার করে নিত্যনতুন উপায়ে পরিত্রাণের পথ খোঁজার সময়ে কিন্তু সতেরোশো ছিয়াত্তরে প্রকাশিত পুঁজিবাদী অর্থনীতির আদি গ্রন্থ অ্যাডাম স্মিথের An inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations অথবা উনিশশো ছত্রিশে প্রকাশিত জন মেনার্ড কেইনসের রচিত The General Theory of Employment, Interest and Money নিয়ে এখন আর তেমন কোনও আলোচনা হয় না। বরং নতুন করে শুরু হয় ডাস ক্যাপিটাল চর্চা।
ডাস ক্যাপিটাল যুক্তি–তথ্য দিয়ে বুঝিয়ে দেয় পুঁজিবাদের চরিত্র এবং তার অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব। সেই কারণেই ডাস ক্যাপিটাল পুঁজিবাদের চক্ষুশূল হলেও এবং তাকে প্রকাশ্যে অবজ্ঞা করা হলেও, সেটি এখনও পর্যন্ত সমাজবিজ্ঞানের সবচেয়ে বেশি চর্চিত আকর গ্রন্থ।
তথ্যসূত্র :
১. মো. আবদুল ওদুদ (এপ্রিল ২০১৪)। রাষ্ট্রদর্শন (২য় সংস্করণ)। ঢাকা: মনন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ৪৯০। আইএসবিএন 978-98-43300-90-4।
২. The “Theories of Surplus Value” are contained in theCollected Works of Marx and Englels: Volumes 30, 31 and 32 (International Publishers: New York, 1988).
৩. লেখক যোজনা কমিশনের প্রাক্তন যুগ্ম উপদেষ্টা
৪. www.wikipedea.com
৫. www.aajkaal.in
৬. www.protomalo.com