অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের জন্ম ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী শহরে। তার পরিবারের আদি নিবাস বর্তমান মাদারীপুর জেলায় ছিল। পিতার কর্মস্থল নোয়াখালীতে তার শৈশব এবং প্রাথমিক শিক্ষা লাভ ঘটে। তার বাবা রাজকুমার সেনগুপ্ত ছিলেন নোয়াখালী আদালতের আইনজীবী। ১৯১৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর, অচিন্ত্যকুমার কলকাতায় চলে আসেন এবং সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন (১৯২০) এবং সাউথ সাবার্বান কলেজ (বর্তমান আশুতোষ কলেজ) থেকে আই. এ. (১৯২২) পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম. এ. (১৯২৬) এবং পরে বি. এল. ডিগ্রী (১৯২৯) লাভ করেন।
কর্মজীবন
১৯২৫ সালে অচিন্ত্যকুমার কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। কল্লোল যুগের প্রভাবশালী সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১৯৩১ সালে তিনি অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে সাব-জজ, জেলা জজ ও ল’ কমিশনের স্পেশাল অফিসার পদে উন্নীত হন। ১৯৬০ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সাহিত্যকর্ম
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত বাংলা সাহিত্যে এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করেছেন। তার প্রথম কবিতা ১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় নীহারিকা দেবী ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়। তাঁর সাহিত্যকর্মে উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা এবং স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
উপন্যাস
- বেদে (১৯২৮): আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। এই উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অভিনন্দনপত্র পাঠান।
- কাকজোৎস্না (১৯৩১): এটি একটি আবেগপূর্ণ উপন্যাস যা তার সাহিত্যিক দক্ষতার পরিচয় বহন করে।
- প্রথম কদমফুল (১৯৬১): একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস যা তার শেষ সময়ের সাহিত্যিক রচনা।
- বিবাহের চেয়ে বড় (১৯৩১) এবং প্রাচীর ও প্রান্তর (১৯৩২): এদের মধ্যে সমাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার বিশ্লেষণ ফুটে উঠেছে।
ছোটগল্প
- টুটা-ফুটা (১৯২৮): তার প্রথম ছোটগল্পের বই যা ছোটগল্প সাহিত্যে তাঁর নতুনত্বের পরিচয় দেয়।
- অকাল বসন্ত (১৯৩২) এবং অধিবাস (১৯৩২): সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনের কাহিনী তুলে ধরে।
কবিতা
- অমাবস্যা (১৯৩০): তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ যা বাংলা কবিতার বৈচিত্র্যকে প্রকাশ করে।
- আমরা (১৯৩৩) এবং নীল আকাশ (১৯৪৯): কবিতার আঙ্গিকে তার উন্নতির পরিচয় দেয়।
স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ
- কল্লোলযুগ (১৯৫০): কল্লোল যুগের সাহিত্যের প্রভাব ও প্রেক্ষাপট নিয়ে বিশ্লেষণ।
জীবনীগ্রন্থ
- পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ (১৯৫২-১৯৫৭): শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী চার খণ্ডে।
- বীরেশ্বর বিবেকানন্দ (১৯৫৮-১৯৬৯): বিবেকানন্দের জীবনী তিন খণ্ডে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে জগৎ্তারিণী পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার এবং শরৎচন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন।
মৃত্যু
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ১৯৭৬ সালের ২৯ জানুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
এই প্রেক্ষাপটে, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের সাহিত্যিক অবদান ও কর্মজীবনের বিশ্লেষণ আমাদের বাংলা সাহিত্যের এক মূল্যবান অধ্যায় উন্মোচন করে।