Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

কুসুমকুমারী দাশ এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

কুসুমকুমারী দাশ (২১ সেপ্টেম্বর ১৮৭৫ – ২৫ ডিসেম্বর ১৯৪৮) বাংলা সাহিত্য জগতের এক অনন্য নক্ষত্র। তার সাহিত্যকর্ম এবং ব্যক্তিত্বে ছড়িয়ে রয়েছে এক অমলিন আলোর রেখা। “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে” গানটি সর্বাধিক পরিচিত হলেও, তার সাহিত্যিক অবদান বহুমুখী ও গভীর। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র জীবনানন্দ দাশ বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নাম, এবং কুসুমকুমারীর প্রভাব ও উৎসাহ তাকে সাহিত্যিক পথে পরিচালিত করেছে। এই নিবন্ধে, কুসুমকুমারী দাশের জীবন ও সাহিত্যকর্ম বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।

জন্ম ও পরিবার

কুসুমকুমারী দাশের জন্ম ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২১শে সেপ্টেম্বর বাখরগঞ্জ জেলার বরিশাল শহরে। তার পিতা চন্দ্রনাথ দাশ এবং মাতা ধনমাণি ছিলেন সংস্কৃতিবান ও বিদ্যানুরাগী। চন্দ্রনাথ দাশ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করার কারণে গ্রামবাসীদের বিরোধিতার সম্মুখীন হন এবং বাধ্য হয়ে গৈলা গ্রামের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন। এই পরিবর্তন কুসুমকুমারীর জীবন ও চিন্তাভাবনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল।

শিক্ষাজীবন

কুসুমকুমারীর শিক্ষাজীবন ছিল স্বাভাবিক হলেও, এটি তার সাহিত্যিক প্রতিভার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাই স্কুলে তিনি প্রথম চার বছর পড়াশোনা করেন। এরপর, স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার বাবা তাকে কলকাতায় পাঠান, যেখানে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে থেকে বেথুন স্কুলে ভর্তি হন। একবছর পর, ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিং-এ লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন।

প্রবেশিকা শ্রেণীতে পড়ার সময় ১৮৯৪ সালে কুসুমকুমারীর বিবাহ হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাশের সঙ্গে। সত্যানন্দ দাশের উৎসাহ ও সহায়তায় কুসুমকুমারী সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান। তার সাহিত্যিক যাত্রা প্রাথমিকভাবে পরিবারের সমর্থন ও ব্রাহ্মসমাজের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।

সাহিত্যকর্ম

কুসুমকুমারী দাশের সাহিত্যকর্মের মূল বৈশিষ্ট্য হল ধর্ম, নীতিবোধ, এবং দেশাত্মবোধের প্রতি গভীর আগ্রহ। ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লেখার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের চিত্রশোভিত বর্ণশিক্ষার বইয়ের প্রথম ভাগে কুসুমকুমারী রচিত ছোট ছোট পদ্যাংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার কবিতা “প্রবাসী” ও “মুকুল” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, যদিও বেশিরভাগ তার লেখাগুলি হারিয়ে গেছে বা তিনি নিজেই নষ্ট করেছেন।

তার কবিতার সংগ্রহ “মুকুল” (১৮৯৬) একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এছাড়াও, পৌরাণিক আখ্যায়িকা নামে একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন। কুসুমকুমারী দাশের সাহিত্যকর্ম মূলত নারী ক্ষমতায়ন, নৈতিকতা, এবং দেশপ্রেমের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে। তার রচিত “আদর্শ ছেলে” গানটি বাংলা সাহিত্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।

সম্মাননা ও পুরস্কার

কুসুমকুমারী দাশের সাহিত্যকর্মের জন্য তাকে বিভিন্ন সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। “নারীত্বের আদর্শ” নামক একটি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় তিনি স্বর্ণ পদক লাভ করেন। এই পুরস্কার তার সাহিত্যিক গুণাবলী ও সমাজে তার ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ।

তার পুত্র কবি জীবনানন্দ দাশ তার মায়ের সাহিত্যিক প্রতিভা সম্পর্কে লিখেছেন, “সাহিত্য পড়ায় ও আলোচনায় মাকে বিশেষ অংশ নিতে দেখেছি। দেশি বিদেশি কোনো কোনো কবি ও ঔপন্যাসিকের কোথায় কি ভাল,কি বিশেষ তাঁরা দিয়ে গেছেন- এ সবের প্রায় প্রথম পাঠ তাঁর কাছ থেকে নিয়েছি। তাঁর স্বাভাবিক কবিমনকে তিনি শিক্ষিত ও স্বতন্ত্র করে তোলবার অবসর পেয়েছিলেন। কিন্তু বেশি কিছু লিখবার সুযোগ পেলেন না।…. তখনকার দিনের সেই অসচ্ছল সংসারের একজন স্ত্রীলোকের পক্ষে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হল না।”

সামাজিক প্রভাব

কুসুমকুমারী দাশের সাহিত্যিক অবদান কেবলমাত্র তার রচনাসমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ব্রাহ্মসমাজের সভা-উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন এবং বরিশালের ব্রাহ্মসমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আচার্যের কাজ করেছেন। তার প্রভাব ও অংশগ্রহণ সত্ত্বেও, সমাজে তার সাহিত্যকর্মের ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়নি। তবুও, তিনি একজন নারীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা কীভাবে শক্তিশালী হতে পারে, তার একটি প্রকৃত উদাহরণ।

শেষ কথা

কুসুমকুমারী দাশ বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি অমূল্য রত্ন। তার সাহিত্যিক প্রতিভা, পারিবারিক সমর্থন, এবং সামাজিক ভূমিকা তাকে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে। তার রচনা ও জীবনযাপন বর্তমান প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। কুসুমকুমারী দাশের জীবন ও সাহিত্যকর্ম সম্বন্ধে আরও গবেষণা ও আলোচনা ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তার অবদান বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী মহিলা কবি হিসেবে পরিচিত। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য, মানবিক অনুভূতি, প্রেম, বিরহ, এবং সমাজের বিভিন্ন দিকগুলো

Read More

মুহম্মদ আবদুল হাই এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মুহম্মদ আবদুল হাই (২৬ নভেম্বর ১৯১৯ – ৩ জুন ১৯৬৯) বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান ধ্বনিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যিক। তার গবেষণা এবং কর্ম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ

Read More

ন্যায় দর্শনের বিষয়বস্তু: ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? ন্যায় দর্শন কী বা কাকে বলে? ন্যায় দর্শনের কয়টি শাখা ও কি কি?

ন্যায়দর্শন হচ্ছে ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম একটি দর্শন। ন্যায়দর্শন হল সেই ভিত্তি যার উপর ভারতের উচ্চতর দর্শনগুলি নির্মিত হয়েছে। ন্যায় দর্শনের প্রবক্তা বা প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি

Read More

বিদ্রোহী কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়

‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৮ সালের কার্তিকে, ২য় বর্ষের ৩য় সংখ্যক ‘মােসলেম ভারত’ পত্রিকায়। কবিতাটি রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের দুর্গাপূজার কাছাকাছি সময়ে। নজরুলের বিদ্রোহী

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.