Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

অন্নদাশঙ্কর রায় এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

অন্নদাশঙ্কর রায় বাংলা সাহিত্যের একজন প্রথিতযশা লেখক ও কবি ছিলেন। তার জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে এই বিশ্লেষণী নিবন্ধটি তার জীবনযাত্রা, সাহিত্যিক অর্জন, ও তার সাহিত্যকর্মের প্রভাবের উপর আলোকপাত করবে।

পারিবারিক ইতিহাস

অন্নদাশঙ্কর রায় ১৫ মার্চ ১৯০৪ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষদের বসতি ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার কোতরং এলাকায়, যা বর্তমানে উত্তরপাড়া কোতরং নামে পরিচিত। তার ঠাকুরদা শ্রীনাথ রায়ের পরিবার এক সময় উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলার রামেশ্বরপুরে বসবাস করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পারিবারিক কলহের কারণে শ্রীনাথ রায় এই অঞ্চল ত্যাগ করেন এবং তাদের নতুন বসতিস্থল হয় ঢেঙ্কানলে।

অন্নদাশঙ্করের পিতা নিমাইচরণ রায় ব্রিটিশ সরকারের চাকরি করেন। প্রাথমিকভাবে তিনি ঢেঙ্কানলের রাজ দরবারে থিয়েটারের ম্যানেজারের কাজ করেন। নিমাইচরণ রায়ের স্ত্রী ছিলেন কটকের পালিত বংশের কন্যা হেমনলিনী।

জীবনের প্রথম দিকে

অন্নদাশঙ্করের শৈশব ও শিক্ষা জীবন ঢেঙ্কানলে শুরু হয়। ১৯২১ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর, তিনি কলকাতার বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কাছে সংবাদপত্রের সম্পাদনা শিখতে যান। শর্টহ্যান্ড, টাইপরাইটিং, এবং প্রুফরিডিং শেখার পরও তার আগ্রহ এই ক্ষেত্রে কমে যায়। পরবর্তীতে তিনি কটকের র্যাভেনশ কলেজ থেকে আই.এ পরীক্ষা দেন এবং পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৫ সালে বি.এ পরীক্ষাতেও তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেন।

অন্নদাশঙ্কর ১৯২৭ সালে এম.এ পড়ার সময় আই.সি.এস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং একই বছর ইংল্যান্ডে সরকারি খরচে যান। সেখানে দুই বছর অবস্থানকালে তার ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী ‘পথে প্রবাসে’ প্রকাশিত হয়।

পরিবার ও কর্মজীবন

১৯৩০ সালে অন্নদাশঙ্কর রায় মার্কিন কন্যা অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ডকে বিবাহ করেন এবং তার নাম পরিবর্তন করে লীলা রায় রাখেন। লীলা রায় বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনেক বই অনুবাদ করেছেন এবং অন্নদাশঙ্করের অনেক লেখা লীলাময় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৩৬ সালে অন্নদাশঙ্কর নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি কুমিল্লা জেলায় জজ হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সরকারি কাজে নিযুক্ত থাকার পর ১৯৫০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিচার বিভাগের সেক্রেটারি হন। ১৯৫১ সালে তিনি স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। ১৯৮৬ সালে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর প্রথম সভাপতি হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।

সাহিত্যকর্ম

অন্নদাশঙ্কর রায় সাহিত্য জগতে একাধিক রচনা করেছেন যা গদ্য ও পদ্য উভয় ক্ষেত্রেই তার বৈচিত্র্য তুলে ধরে। তার সাহিত্যকর্ম পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রকার সাহিত্যিক কাজের জন্য তিনি সম্মানিত হয়েছেন।

উপন্যাস

  • সত্যাসত্য (৬টি উপন্যাস)
    • যার যেথা দেশ
    • অজ্ঞাতবাস
    • কঙ্কাবতী
    • দুঃখমোচন
    • মর্ত্যের স্বর্গ
    • অপসারণ
  • আগুন নিয়ে খেলা
  • অসমাপিকা
  • পুতুল নিয়ে খেলা
  • না
  • কন্

প্রবন্ধ

  • তারুন্য
  • আমরা
  • জীবনশিল্পী
  • ইশারা
  • জীয়নকাঠি
  • দেশকালপাত্র
  • প্রত্যয়
  • নতুন করে বাঁচা
  • আধুনিকতা
  • পারী
  • শিক্ষার সংকট
  • চিত্ত যেথা ভয়শূন্য
  • সাতকাহন

আত্মজীবনী

  • বিনুর বই
  • পথে প্রবাসে
  • জাপানে

ছোটগল্প

  • প্রকৃতির পরিহাস
  • দু কান কাটা
  • হাসন শখী
  • মন পাহন
  • যৌবন জ্বালা
  • কামিনি কাঞ্চন
  • রুপের দায়

পুরস্কার ও সম্মাননা

অন্নদাশঙ্কর রায় সাহিত্যকর্মের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে জগত্তারিণী পদক প্রদান করে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে দেশিকোত্তম সম্মান প্রদান করে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডিলিট) উপাধি প্রদান করে। অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে রয়েছে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৬২), আনন্দ পুরস্কার (১৯৮৩, ১৯৯৪), বিদ্যাসাগর পুরস্কার, শিরোমণি পুরস্কার (১৯৯৫), রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল পুরস্কার এবং বাংলাদেশের জেবুন্নিসা পুরস্কার।

মৃত্যু

অন্নদাশঙ্কর রায় ২৮ অক্টোবর ২০০২ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবনের দীর্ঘকাল ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে অমর হয়ে থাকবে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী মহিলা কবি হিসেবে পরিচিত। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য, মানবিক অনুভূতি, প্রেম, বিরহ, এবং সমাজের বিভিন্ন দিকগুলো

Read More

মুহম্মদ আবদুল হাই এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

মুহম্মদ আবদুল হাই (২৬ নভেম্বর ১৯১৯ – ৩ জুন ১৯৬৯) বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান ধ্বনিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যিক। তার গবেষণা এবং কর্ম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ

Read More

ন্যায় দর্শনের বিষয়বস্তু: ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? ন্যায় দর্শন কী বা কাকে বলে? ন্যায় দর্শনের কয়টি শাখা ও কি কি?

ন্যায়দর্শন হচ্ছে ভারতীয় ষড়দর্শনের অন্যতম একটি দর্শন। ন্যায়দর্শন হল সেই ভিত্তি যার উপর ভারতের উচ্চতর দর্শনগুলি নির্মিত হয়েছে। ন্যায় দর্শনের প্রবক্তা বা প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি

Read More

বিদ্রোহী কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়

‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৮ সালের কার্তিকে, ২য় বর্ষের ৩য় সংখ্যক ‘মােসলেম ভারত’ পত্রিকায়। কবিতাটি রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের দুর্গাপূজার কাছাকাছি সময়ে। নজরুলের বিদ্রোহী

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.