Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta
Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

নীলিমা ইব্রাহিম এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

নীলিমা ইব্রাহিম, বাংলাদেশের এক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক এবং সমাজকর্মী হিসেবে চিহ্নিত। তার জীবন ও সাহিত্যকর্ম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি নানা ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর জীবনচরিত এবং সাহিত্যকর্মের বিস্তৃত আলোচনা এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য।

শৈশব ও শিক্ষাজীবন

নীলিমা ইব্রাহিমের জন্ম ১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর খুলনার বাগেরহাটে জমিদার প্রফুল্ল রায় চৌধুরী ও কুসুম কুমারী দেবীর পরিবারে। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় খুলনা করনেশন গার্লস স্কুল থেকে, যেখানে তিনি প্রথম ধাপের শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর কলকাতার ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন থেকে স্কুল এবং ইন্টারমিডিয়েট স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। শিক্ষা ক্ষেত্রে তার আগ্রহ ছিল গভীর, যা তাকে স্কটিশ চার্চ কলেজে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি কলা এবং শিক্ষায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যের উপর এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর, তিনি ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর এই শিক্ষাগত প্রাপ্তি তাকে সাহিত্যের গভীরতা ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দক্ষ করে তোলে।

পারিবারিক জীবন

নীলিমা ইব্রাহিমের পারিবারিক জীবনও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি পাঁচ কন্যার মাতা, যাদের মধ্যে এমিরেটাস অধ্যাপক হাজেরা মাহতাব, ডলি আনোয়ার এবং অধ্যাপক কিশোয়ারা আজাদ উল্লেখযোগ্য। কিশোয়ারার স্বামী একে আজাদ খান জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত এবং জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে পরিচিত।

কর্মজীবন

নীলিমা ইব্রাহিমের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষা ক্ষেত্রে। তিনি খুলনা করনেশন গার্লস স্কুল, লোরেটো হাউস এবং ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং ১৯৫৬ সালে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বাংলা একাডেমির অবৈতনিক মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিশ্ব নারী ফেডারেশনের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর কাজের মাধ্যমে তিনি শিক্ষা এবং সাহিত্যক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছেন।

জাতীয় শিশু দিবসের প্রস্তাবক

১৯৯৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর, নীলিমা ইব্রাহিম বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার জাতীয় সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয় এবং ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মত শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ বেসরকারীভাবে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

সাহিত্যকর্ম

নীলিমা ইব্রাহিমের সাহিত্যকর্মের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের রচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

উপন্যাস

১. বিশ শতকের মেয়ে (১৯৫৮): এটি তার প্রথম উপন্যাস এবং বাংলা সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। ২. এক পথ দুই বাক (১৯৫৮): এটি তার দ্বিতীয় উপন্যাস, যা সমসাময়িক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গ নিয়ে লেখা। ৩. কেয়াবন সঞ্চারিনী (১৯৫৮): সামাজিক নীতি এবং মানবিক অনুভূতি নিয়ে তার একটি গঠনমূলক কাজ। ৪. বহ্নিবলয় (১৯৮৫): এটি একটি প্রায় সঙ্কটময় পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে, যা তার সাহিত্যিক দক্ষতার প্রমাণ।

নাটক

১. দুইয়ে দুইয়ে চার (১৯৬৪): একটি উল্লেখযোগ্য নাটক যা সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। ২. যে অরণ্যে আলো নেই (১৯৭৪): মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক, যা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও অনুভূতি তুলে ধরে। ৩. রোদজ্বলা বিকেল (১৯৭৪): আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক, যা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সামাজিক পরিস্থিতি এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটকে বিশ্লেষণ করে।

প্রবন্ধ

১. আমি বীরাঙ্গনা বলছি: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধ। ২. শরৎ প্রতিভা: বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ৩. বাংলার কবি মধুসূদন: মধুসূদন দত্তের সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিশ্লেষণ। ৪. শতাব্দীর অন্ধকারে (সাদা): সমকালীন সমাজ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ।

পুরস্কার ও সম্মাননা

নীলিমা ইব্রাহিম তাঁর জীবনকালে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন, যা তার সাহিত্যিক ও সামাজিক কাজের স্বীকৃতি। তাঁর অর্জিত পুরস্কারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

১. বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯) ২. জয় বাংলা পুরস্কার (১৯৭৩) ৩. মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার (১৯৮৭) ৪. লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৮৯) ৫. বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী স্মৃতি পদক (১৯৯০) ৬. অনন্য সাহিত্য পদক (১৯৯৬) ৭. বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬) ৮. বঙ্গবন্ধু পুরস্কার (১৯৯৭) ৯. শেরে বাংলা পুরস্কার (১৯৯৭) ১০. থিয়েটার সম্মাননা পদক (১৯৯৮) ১১. একুশে পদক (২০০০) ১২. স্বাধীনতা পদক (২০১১)

মৃত্যু

নীলিমা ইব্রাহিম ২০০২ সালের ১৮ জুন মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পরেও তার সাহিত্যকর্ম এবং সমাজকর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান অব্যাহত রয়েছে।

নীলিমা ইব্রাহিমের জীবন এবং সাহিত্যকর্ম তাঁর ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং সমাজের উন্নয়নে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর কাজ এবং অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

কাজী ইমদাদুল হক এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

কাজী ইমদাদুল হক (৪ নভেম্বর ১৮৮২ – ২০ মার্চ ১৯২৬) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের একজন প্রখ্যাত বাঙালি লেখক, শিক্ষাবিদ, এবং সমাজকর্মী। তার সাহিত্যকর্ম এবং শিক্ষাবিষয়ক অবদানের

Read More

কাজী মোতাহার হোসেন এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

কাজী মোতাহার হোসেন (৩০ জুলাই, ১৮৯৭ – ৯ অক্টোবর, ১৯৮১) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি পরিসংখ্যানবিদ ও সাহিত্যিক। তাঁর পৈতৃক বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বাগমারা

Read More

ধ্বনিবিজ্ঞান কী বা ধ্বনিবিজ্ঞান কাকে বলে? ধ্বনিবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার পরিচয় দাও!

ধ্বনিবিজ্ঞান: ধ্বনিবিজ্ঞান হচ্ছে বাক্ ধ্বনির বিশ্লেষণ। বাগ্‌ধ্বনি সম্পর্কে পঠন-পাঠনকে বলা হয় ‘ধ্বনিবিজ্ঞান’। The science, study, analysis and classification of sounds, including the study of their

Read More

ধ্বনিবিজ্ঞান কী? ধ্বনিবিজ্ঞান ও ধ্বনিতত্ত্বের পারস্পারিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর!

ধ্বনিবিজ্ঞান হচ্ছে বাক ধ্বনির বিশ্লেষণ। The science, study, analysis and classification of sounds, including the study of their production, transmission and perception. অপরদিকে ধ্বনিতত্ত্ব হলো

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.