Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

Banglasahitta

Welcome to Banglasahitta

One Step to the Heart

শহীদুল্লা কায়সার এর জীবন ও সাহিত্যকর্ম

শহীদুল্লা কায়সার (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ – ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী। তার প্রকৃত নাম আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লা। তিনি ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মাজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এবং মাতার নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। পরিবারের আট সন্তানদের মধ্যে শহীদুল্লা ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি।

শিক্ষাজীবনের শুরুতে শহীদুল্লা কায়সার সরকারি মডেল স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে মাদরাসা-ই-আলিয়া’র অ্যাংলো পার্সিয়ান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন, যেখানে ১৯৪৬ সালে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য ভর্তি হলেও তা সম্পন্ন করেননি। একই সাথে তিনি ‘রিপন কলেজে’ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ) আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ভারত বিভাগের পর তার পরিবার ঢাকায় চলে আসে এবং শহীদুল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তরের জন্য ভর্তি হন, কিন্তু এ ডিগ্রি লাভের আগেই লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটান।

রাজনৈতিক জীবন

শহীদুল্লা কায়সার রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন এবং ১৯৫১ সালে পার্টির সদস্য হন। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন এবং ‘দেশপ্রেমিক’ এবং ‘বিশ্বকর্মা’ ছদ্মনামে রাজনৈতিক লেখালেখি করেছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পুনরায় গ্রেফতার হন এবং কয়েক বছর পর মুক্তি পান। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারির পর তাকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৬২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আটক রাখা হয়।

কর্মজীবন

শহীদুল্লা কায়সার সাংবাদিকতা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে দৈনিক সংবাদ-এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬২ সালে মুক্তি পেয়ে পুনরায় দৈনিক সংবাদে যোগদান করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সাংবাদিকতা করেন।

মফিদুল হক, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, শহীদুল্লা কায়সারের ব্যক্তিত্ব এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলেন যে, “ওনার সামনে সরাসরি যাবার বা কথা বলার যোগ্যতা বোধকরি তখন আমাদের ছিল না। আমরা দ্বিধায় ভুগতাম। যদিও আমি জড়িত ছিলাম ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গেই।”

সাহিত্যকর্ম

শহীদুল্লা কায়সার বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে:

উপন্যাস:

  • সারেং বৌ (১৯৬২) – চলচ্চিত্র রূপ ১৯৭৮
  • সংশপ্তক (১৯৬৫)
  • কৃষ্ণচূড়া মেঘ
  • তিমির বলয়
  • দিগন্তে ফুলের আগুন
  • সমুদ্র ও তৃষ্ণা
  • চন্দ্রভানের কন্যা
  • কবে পোহাবে বিভাবরী (অসমাপ্ত)

স্মৃতিকথা:

  • রাজবন্দীর রোজনামচা (১৯৬২)

ভ্রমণবৃত্তান্ত:

  • পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ (১৯৬৬)

সমগ্র:

  • উপন্যাসসমগ্র-১
  • উপন্যাসসমগ্র-২
  • গল্পসমগ্র

ব্যক্তিগত জীবন

শহীদুল্লা কায়সার ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ তারিখে পান্না কায়সারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে: শমী কায়সার, যিনি বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, এবং অমিতাভ কায়সার। পান্না কায়সার একজন লেখক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত, যিনি সপ্তম জাতীয় সংসদ সদস্য (১৯৯৬ – ২০০১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শহীদুল্লা কায়সারের ভাই জহির রায়হান ছিলেন একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার।

পুরস্কার

শহীদুল্লা কায়সার তার সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জন্য বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন:

  • আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২)
  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৯)
  • একুশে পদক (১৯৮৩)
  • স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৮)

মৃত্যু

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শহীদুল্লা কায়সারকে আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা তার বাসা থেকে অপহরণ করেন। তারপর তিনি আর ফিরে আসেননি। তার অপহরণের পর তাকে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হয়।

শহীদুল্লা কায়সারের জীবন ও কাজ বাংলাদেশের সাহিত্যে ও রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

আর্টিকেল’টি ভালো লাগলে আপনার ফেইসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে দিন অথবা পোস্ট করে রাখুন। তাতে আপনি যেকোনো সময় আর্টিকেলটি খুঁজে পাবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন, তাতে আপনার বন্ধুরাও আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবে।

গৌরব রায়

বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ।

লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে: ক্লিক করুন

6.7k

SHARES

Related articles

মেঘনাদবধ কাব্য প্রথম সর্গ ব্যাখ্যা

মেঘনাদবধ কাব্যে: প্রথম সর্গের নাম অভিষেক। বাগদেবী সরস্বতী ও কল্পনাদেবীর বন্দনা করে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর কাব্য শুরু করেছেন। লঙ্কার রাজসভায় রাজা রাবণ বসে আছেন।

Read More

ট্র্যাজেডি কাকে বলে? ট্র্যাজেডির বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণগুলো কী কী? ট্র্যাজেডির গঠন কৌশল আলোচনা করো

অ্যারিস্টটলের ‘পােয়েটিক্স’ অবলম্বনে ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা, স্বরূপ ও শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে আলােচনা করো ‘পােয়েটিক্স’ গ্রন্থের ষষ্ঠ অধ্যায়ে অ্যারিস্টটল ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন,-‘Tragedy, then, is an imitation

Read More

বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহন রায়ের অবদান মূল্যায়ন করো

বাংলা গদ্য ইতিহাসের প্রথম পর্বের প্রধান পুরুষ রামমােহন রায়। যে ভিত গড়ে উঠেছিলাে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিত মুনসিদের হাতে, হােক তা অনুবাদ, হােক পাঠ্যস্তরে উপযােগী

Read More

মহাকাব্য হিসেবে মেঘনাদবধ কাব্যের সার্থকতা বিচার করো

সাহিত্য সমালােচনায় মহাকাব্যকে দুটি শ্রেনীতে ভাগ করা যায়: Authentic Epic এবং Literary Epic কেউ কেউ মনে করেন মহাকাব্য অতীত যুগের সৃষ্টি। আধুনিক কালে খাঁট মহাকাব্য

Read More
Gourab Roy

Gourab Roy

I completed my Honors Degree in Bangla from Shahjalal University of Science & Technology in 2022. Now, I work across multiple genres, combining creativity with an entrepreneurial vision.

বিশ্বসেরা ২০ টি বই রিভিউ

The content is copyright protected.